ভারতের মহাকাশ অভিযানে যুক্ত হল আরেকটি গৌরবময় অধ্যায়।ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে চড়ে পাড়ি দিলেন মহাকাশের পথে। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ থেকে ফ্যালকন ৯ রকেট উৎক্ষেপণ করে তাঁকে মহাকাশে পাঠানো হয়। উল্লেখ করার মত তথ্য হল ঠিক এই একই লঞ্চপ্যাড থেকেই ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন।
প্রায় চার দশক পর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা হচ্ছেন দ্বিতীয় ভারতীয় যিনি মহাকাশে যাচ্ছেন। ১৯৮৪ সালে উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা প্রথম ভারতীয় হিসেবে সোভিয়েত মহাকাশযানে করে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘স্যালুট-৭’ মহাকাশ স্টেশনে আট দিন কাটিয়েছিলেন। রাকেশ শর্মার পর শুভাংশু শুক্লার মহাকাশযাত্রা ভারতের জন্য শুধু একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, এটি প্রতিরক্ষা ও বেসরকারি মহাকাশ উদ্যোগের একত্রে সাফল্যের প্রতীক। অ্যাক্সিওম স্পেস-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে উৎক্ষেপণের আগে শুভাংশু বলেন, “এই যাত্রা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।… আমি চাই এই মিশন ভারতের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করুক, যেমন ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার কাহিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।”
শুভাংশু শুক্লার জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৮৫, উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌ শহরে। তিনি ২০০৬ সালে ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার উইংয়ে কমিশন পান এবং আজ অবধি সু-৩০, এমকেআই, মিগ্-২১, মিগ্-২৯, জাগুয়ার, হক, ডর্নিয়ার এবং আন-৩২ সহ বিভিন্ন বিমানে ২,০০০ ঘণ্টার বেশি উড়ান সম্পন্ন করেছেন। একজন দক্ষ যুদ্ধবিমান চালক হিসেবে পরিচিত শুভাংশু, ইসরো-র গগনযান মিশনের জন্য নির্বাচিত চার নভোচারীর অন্যতম।
চার সদস্যের এই দলটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ প্রায় ১৪ দিনের এক গবেষণামূলক মিশনে অংশ নেবে। তারা মোট ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাবে, যার মধ্যে ৭টি ভারতের গবেষকদের প্রস্তাবিত। এই মিশনের অংশ হিসেবে শুভাংশু শুক্লা মহাকাশ থেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন বলে জানা গেছে।
মিশনের আগে শুভাংশু শুক্লা প্রায় এক মাস কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন, যাতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও সংক্রামণমুক্ত থাকেন। অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের মহাকাশযাত্রায় আরও যাঁরা রয়েছেন তাঁরা হলেন পোল্যান্ডের স্লাভোস উজনানস্কি-উইসনিয়েভস্কি, হাঙ্গেরির টিবার কাপু ও এই মিশনের কমান্ডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেগি হুইটসন।
তবে আবহাওয়া ও কারিগরি সমস্যার কারণে অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের উৎক্ষেপণের তারিখ বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে। বুধবার ২৫ জুন ছিল এই অভিযানের ষষ্ঠ নির্ধারিত দিন। একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে শুভাংশু শুক্লা বলেন, “ আমি শুধু যন্ত্রপাতি ও উপকরণ বহন করছি না, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি ১০০ কোটি মানুষের আশা ও স্বপ্ন।” প্রায় ২৮ ঘণ্টার কক্ষপথের যাত্রা শেষে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট নাগাদ ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ডক করার কথা রয়েছে।
Leave a comment
Leave a comment
