মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছিলেন ইরানের বেশ কিছু পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের কথা। অথচ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে অন্য কিছু। যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের যেসব পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ করে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে পেরেছে মাত্র।
এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে ডিআইএ। তারা মার্কিন সেনাবাহিনীর পশ্চিম এশিয়া সংক্রান্ত কমান্ড ‘সেন্টকম’-এর সঙ্গে যৌথভাবে হামলার পরে ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করেছে। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের ‘ফোর্ডো’ ও ‘নাটাঞ্জ’ নামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় এখনও এমন যন্ত্রপাতি রয়েছে যা কয়েক মাসের মধ্যে আবার চালু করা সম্ভব।
যদিও এই গোয়েন্দা রিপোর্টকে একেবারে অস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গোয়েন্দা রিপোর্টকে “ফেক নিউজ” বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ তিনি লিখেছেন, “ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে! নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং সিএনএন জনসাধারণের রোষের মুখে পড়েছে।” হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, “যে নিচু স্তরের কোনো ব্যক্তি এই রিপোর্ট ফাঁস করেছে, সে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আঘাত করার চেষ্টা করছে।”
গোয়েন্দা রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, হামলার আগে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছিল ইরান। হামলার ঠিক আগে ‘ফোর্ডো’ কেন্দ্রে উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায় অন্তত ১৬টি মালবাহী ট্রাক প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই ট্রাকগুলোর মাধ্যমেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা। এদিকে, ট্রাম্প এক টেলিভিশন ভাষণে ইরানের ওপর হামলাকে “বিপুল সামরিক সাফল্য” বলে দাবি করে বলেন, “নাটাঞ্জ, ফোর্ডো ও ইসফাহান এই তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। ইরান এখন শান্তির পথে হাঁটতে বাধ্য।”
তবে প্রতিরক্ষা দফতরের এক অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশেষ করে ফোর্ডো কেন্দ্রটি আক্রমণের পরও সক্রিয় থাকতে পারে। এটি ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর একটি। জাগরোস পর্বতমালার নিচে, ১৫০ থেকে ৩০০ ফুট পাথরের গভীরে তৈরি এই পারমাণবিক কেন্দ্র। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা জিবিইউ-৫৭ দিয়েও এটি পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব কি না, সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সাম্প্রতিক হামলায়, মার্কিন বি-২ বোমার বিমান থেকে ফোর্ডোতে ফেলা হয় ১২টি জিবিইউ-৫৭ বোমা এবং নাটাঞ্জে ফেলা হয় আরও দুটি। পাশাপাশি, মার্কিন নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন থেকে ইসফাহানে ছোড়া হয় প্রায় ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে, এই হামলা পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা জেনারেল ড্যান কেইন, বলেন, “পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনো সম্পন্ন হয়নি।” বলাই যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের মধ্যে রয়েছে বিরোধ রয়েছে।