সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
একেই হয়তো বলে ‘ মরার উপর খাঁড়ার ঘা ‘।
আগামী ২৫ জুলাই থেকে রাজ্যের আঞ্চলিক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পারমিট পাওয়া সমস্ত বাস ও মিনিবাসে ট্রেনের ধাঁচে ‘হয়ার ইজ মাই বাস’ (where is my bus) নামে বিশেষ অ্যাপ চালু করতে চায় রাজ্য পরিবহন দফতর। তার জন্য প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে একটি করে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল এবং উপযুক্ত সিম কার্ড রাখতে হবে বাস মালিকদেরই। ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবহন দফতরের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাস ও মিনিবাস মালিক সংগঠনগুলিকে। যে সিদ্ধান্তকে ‘অবিবেচক’ বলে মনে করছেন বাস মালিকরা। ১৫ বছরের বেশি বয়ঃসীমার বাস বাতিলের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জেরবার বাস ও মিনিবাস মালিকরা, করোনাকাল থেকেই পরিবহন ব্যবসায় মন্দার প্রভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারা যায়নি, মেট্রো অ্যাপ ক্যাবের গুঁতোয় শহর ও শহরতলির বাস-মিনিবাসে যাত্রী সংখ্যা দিন দিন কমছে, এই অবস্থায় নতুন করে এ ধরনের সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘বিবেচনাহীন’
এবং ‘জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা’ বলেই মনে করছেন বাস ও মিনিবাস মালিকপক্ষরা। এমনিতেই করোনাকাল থেকেই রাজ্য সরকার অনুমোদিত কোনো নির্দিষ্ট ভাড়া তালিকা নেই বাস ও মিনিবাসগুলিতে। তা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসকর্মীদের নিত্যদিনের ঝগড়া অব্যাহত। এমনকি এই ঝগড়ার পরিণতি গড়িয়েছে থানা পুলিশ পর্যন্ত। এ ধরনের ঝামেলার মধ্যে এবার ‘হয়ার ইজ মাই ট্রেন’ এর ধাঁচে’হয়ার ইস মাই বাস ‘ চালু হলে যাত্রী অশান্তি যে বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ কলকাতা শহর ও শহরতলির যানজট, মিছিল-মিটিং এবং সিগনালিং ব্যবস্থা সামলে ঘড়ি ধরে বাস পরিষেবা দেওয়া একপ্রকার দুঃসাধ্য। এমনিতেই পরিবহন ব্যবসায় মন্দার চাপে বহু বেসরকারি রুটের বাস রাস্তায় নামতে পারছে না। এ নিয়ে সরকারের কাছে নানাভাবে আবেদন নিবেদন করা সত্ত্বেও সুরাহা মেলেনি বলে জানাচ্ছেন বাস মালিক সংগঠনগুলি। তার উপর ঘড়ি ধরে পথ চলার এই বিশেষ অ্যাপ যে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ এমনটাই মনে করছেন বাস মালিকরা।
উল্লেখযোগ্য, এর আগে ‘পথসাথী’ নামে এ ধরনের একটি বিশেষ অ্যাপ সরকারি বাস পরিষেবায় চালু করেছিল রাজ্য পরিবহন দফতর। যদিও করোনাকাল থেকে সেই অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ‘পথসাথী’ অ্যাপের আর খোঁজ মেলেনি।
বাস ও মিনিবাস সংগঠনের পক্ষে প্রদীপনারায়ণ বসু জানিয়েছেন “পরিবহণ দপ্তর একপ্রকার জোর করে এই বিশেষ অ্যাপ বাস মালিকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছেন। কিন্তু বাস মালিকদের ক্ষতির দিকটা তারা বিচার করতে চাইছেন না। এমনিতেই পরিবহন ব্যবসার মন্দায় জর্জরিত বাস মালিকরা তার ওপর এই অতিরিক্ত খরচের ফিরিস্তির জেরে আরও বেশি বাস ও মিনিবাস রাস্তা থেকে বেস যাবে।”
এই সংক্রান্ত বৈঠকে বাস ও মিনিবাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত বাসে উঠলেই দশ টাকা ভাড়া সরকারিভাবে অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র আরটিএ বা আঞ্চলিক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত নয়, এসটিএ বা রাজ্য পরিবহন কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত বাস এবং সরকারি বাসগুলিকেও এই বিশেষ অ্যাপ পরিষেবার আওতায় আনতে হবে বলেও পরিবহন দফতরকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে শহর ও শহরতলির সমস্ত বাসস্ট্যান্ড গুলিতে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি এবং ডিসপ্লে বোর্ড লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বাস মালিকরা। যদিও সামগ্রিকভাবে বাস ও মিনিবাস মালিকদের এ ধরনের প্রস্তাবে ভরসা বা উপযুক্ত আশ্বাস মেলেনি বলেই জানিয়েছেন বাস মালিকরা। অতিরিক্ত খরচের ধাক্কায় রাজ্যের গণপরিবহনে সমস্যা আরও জটিল হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।