বাদুড় থেকে উৎপন্ন ২০টি নতুন ভাইরাসের হদিস চিনে! খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ। ইউনান প্রদেশে চালানো এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০টি প্রজাতির ১৪২টি বাদুড়ের কিডনির নমুনা বিশ্লেষণ করে ২২টি ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পান, যার মধ্যে ২০টি আগে কখনও ধরা পড়েনি। সবচেয়ে বিপজ্জনক দুটি ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে ইউনান ব্যাট হেনিপাভাইরাস ১ এবং ২। নিপাহ ও হেন্ড্রা ভাইরাসের সঙ্গে মিল রয়েছে এই ভাইরাসগুলি। মানুষের মস্তিষ্কে তীব্র প্রদাহ এবং শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে এই ভাইরাসগুলি।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ভাইরাসগুলি বাদুড়ের কিডনিতে অবস্থান করায় সেগুলি মূত্রের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। যদি বাদুড়ের বাসস্থান সংলগ্ন এলাকায় থাকা ফল বা পানীয় জল তাদের মূত্রে দূষিত হয়, তাহলে তা মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে রোগ ছড়াতে পারে। আর এই তথ্য ভাইরোলজিস্টদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এছাড়াও গবেষণায় প্রথমবারের মতো একটি নতুন প্রোটোজোয়া প্যারাসাইট এবং নতুন এক ব্যাকটেরিয়াও শনাক্ত হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ক্লোসিয়েলা ইউনানেনসিস ও ফ্লেভোব্যাক্টেরিয়াম ইউনানেনসিস। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এখনই কোনো মহামারি ছড়ানোর আশঙ্কা নেই, তবে এই আবিষ্কার আপাতত একটি সতর্কবার্তা। প্রকৃতিতে এখনও বহু বিপজ্জনক ভাইরাস লুকিয়ে রয়েছে। এদিকে মানুষ যখন বনাঞ্চল ধ্বংস করে গৃহনির্মাণ করার কারণে এই ভাইরাসগুলোর সঙ্গে সংস্পর্শ বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপের কারণেই বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের সংঘাত বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
চিন্তার বিষয়, ইউনান অঞ্চলের যেসব বাদুড় এই ভাইরাস বহন করছে, তারা অনেক সময় গ্রামঘেঁষা ফলের বাগানে আশ্রয় নেয়। ফলে সেই ফল বা তার আশপাশের পানীয় জল সহজেই তাদের মূত্রে সংক্রমিত হতে পারে। এইভাবে ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং মারাত্মক সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমানে কোনও সংক্রমণ বা মহামারির প্রমাণ না মিললেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যদি মানুষ সতর্ক না হয়, তাহলে আগামীতে আরও বড় স্বাস্থ্য সংকটের মুখে পড়তে হতে পারে। তাই গবেষকদের মতে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাদুড়ের শরীরের বিশেষ করে কিডনির আরও গভীর পর্যবেক্ষণ এবং বন্যপ্রাণীর ওপর নজরদারি চালানো জরুরি হয়ে পড়েছে।