সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
রথযাত্রা মানেই জগন্নাথ অর্থাৎ বিষ্ণুর অবতার। আর প্রসঙ্গে যখন বিষ্ণু বা কৃষ্ণ তখন ‘ছাপ্পান্ন ভোগ’ তো থাকবেই। পুরী হোক বা দিঘা, জগন্নাথের রথযাত্রায় একাধিক উপাচারের অন্যতম আকর্ষণ হল ‘ছাপ্পান্ন ভোগ’ নিবেদন।
এমনকি পুরাণেও এই ‘ছাপ্পান্ন ভোগের’ উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু জানেন কি কেন দেওয়া হয় এই ‘ছাপ্পান্ন ভোগ’? আর এই বিশেষ ভোগে কি কি থাকে?
পুরাণ মতে, যশোদা বালক কৃষ্ণকে আট প্রহর খেতে দিতেন। কিন্তু, একটা সময় ইন্দ্রের রোষে পড়ে মহাপ্রলয়ের সৃষ্টি হয়। সেই সময় প্রাণীদের রক্ষা করতে নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পাহাড় তুলে নিয়েছিলেন কৃষ্ণ। সাতদিন খাবার ও জল কোনও কিছুই মুখে না দিয়ে একভাবে ছিলেন। প্রলয় বন্ধ হওয়ার পর সেই পাহাড় নামিয়ে রেখেছিলেন। এদিকে যে ছেলে দিনে আটবার খাবার খেতো তাঁকে টানা সাতদিন অনাহারে থাকতে দেখে ব্যাকুল হয়ে পড়ে মা যশোদার মন। তখন ব্রজবাসী-সহ যশোদা সাতদিন ও আট প্রহর হিসেবে কৃষ্ণের জন্য ছাপ্পান্ন টি পদ পরিবেশন করেছিলেন। আর সেই থেকেই নারায়ণের ‘ছাপ্পান্ন ভোগ’ চলে আসছে। পুরাণ মতে, ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে চার ধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল- উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথ ধাম, গুজরাতের দ্বারকা ধাম, ওড়িশার পুরী ধাম এবং কেরলের রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন, তারপর গুজরাটের দ্বারকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন। আর পুরী ধামে যেখানে তিনি ভোজন করেন সেখানে ভোগের কোনও চমক থাকবে না তা কি হয়। পুরাণ মতে, ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত করা হয় জগন্নাথদেবকে। জগন্নাথের মধ্যে বিষ্ণুর সব অবতারের চিহ্ন আছে। আর সেই কারণে তাঁকেও অর্পণ করা হয় ‘ছাপান্ন ভোগ’।
কি কি উপকরণে সমৃদ্ধ জগন্নাথের এই ‘ছাপ্পান্ন ভোগ’ ?
১) উকখুড়া অর্থাৎ মুড়ি
২) নাড়িয়া কোড়া অর্থাৎ নারকেল নাড়ু
৩) খুয়া অর্থাৎ খোয়া ক্ষীর
৪) দই
৫) পাচিলা কদলি অর্থাৎ পাকা কলা
৬) কণিকা অর্থাৎ সুগন্ধী ভাত
৭) টাটা খিচুড়ি অর্থাৎ শুকনো খিচুড়ি
৮) মেন্ধা মুণ্ডিয়া অর্থাৎ বিশেষ ধরণের কেক
৯) বড়া কান্তি অর্থাৎ বড় কেক
১০) মাথা পুলি অর্থাৎ পুলি পিঠে
১১) হামসা কেলি অর্থাৎ মিষ্টি কেক
১২) ঝিলি অর্থাৎ এক ধরণের প্যান কেক
১৩) এন্ডুরি অর্থাৎ নারকেল দিয়ে তৈরি কেক
১৪) আদাপচেদি অর্থাৎ আদা দিয়ে তৈরি চাটনি
১৫) শাক ভাজা
১৬) মরিচ লাড্ডু অর্থাৎ লঙ্কার লাড্ডু
১৭) করলা ভাজা
১৮) ছোট্ট পিঠে
১৯) বরা অর্থাৎ দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টি
২০) আরিশা অর্থাৎ ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি
২১) বুন্দিয়া অর্থাৎ বোঁদে
২২) পাখাল অর্থাৎ পান্তা ভাত
২৩) খিরি অর্থাৎ পায়েস
২৪) কাদামবা অর্থাৎ বিশেষ মিষ্টি
২৫) পাত মনোহার মিষ্টি
২৬) তাকুয়া মিষ্টি
২৭) ভাগ পিঠে
২৮) গোটাই অর্থাৎ নিমকি
২৯) দলমা অর্থাৎ ভাত ও সবজি
৩০) কাকারা মিষ্টি
৩১) লুনি খুরুমা অর্থাৎ নোনতা বিস্কুট
৩২) আমালু অর্থাৎ মিষ্টি লুচি
৩৩) বিড়ি পিঠে
৩৪) চাড়াই নাডা মিষ্টি
৩৫) খাস্তা পুরি
৩৬) কদলি বরা
৩৭) মাধু রুচি অর্থাৎ মিষ্টি চাটনি
৩৮) সানা আরিশা অর্থাৎ রাইস কেক
৩৯) পদ্ম পিঠে
৪০) পিঠে
৪১) কানজি অর্থাৎ চাল দিয়ে বিশেষ মিষ্টি
৪২) দাহি পাখাল অর্থাৎ দই ভাত
৪৩) বড় আরিশা
৪৪) ত্রিপুরি
৪৫) সাকারা অর্থাৎ সুগার ক্যান্ডি
৪৬) সুজি ক্ষীর
৪৭) মুগা সিজা
৪৮) মনোহরা মিষ্টি
৪৯) মাগাজা লাড্ডু
৫০) পানা
৫১) অন্ন
৫২) ঘি ভাত
৫৩) ডাল
৫৪) বেসর অর্থাৎ সবজি বিশেষ
৫৫) মাহুর অর্থাৎ লাবরা
৫৬) সাগা নাড়িয়া অর্থাৎ নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত