সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
রথ অর্থাৎ নিজের শরীর, রথের সারথি অর্থাৎ মন এবং রথের রশি অর্থাৎ ভক্তি , এই তিনের সম্মিলনে রথযাত্রা বা আরাধ্যের সঙ্গে নিজের আত্মাকে বিলীন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় হল রথ যাত্রার ধর্মীয় মাহাত্ম্য। যদিও তাৎপর্যপূর্ণ এটাই যে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের এই রথযাত্রায় রথের মূল রশির নাগাল পাবেন না কোন ভক্ত বা দর্শনার্থীরা। রথের মূল রশি টেনে রথ খেয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সাধু-সন্তু ও সন্ন্যাসীরা। ত্রি ক্ষেত্র পুরীর রথযাত্রায় যেখানে লাখো মানুষের টানে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার রথ এগিয়ে চলে সেখানে দিঘার রথযাত্রায় রথের মূল রশি টেনে ভক্ত ও ভগবানের মেলবন্ধনের সুযোগ থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হবেন ভক্তকুল। যদিও জগন্নাথ মন্দির থেকে প্রায় এক কিলোমিটার যাত্রা পথে তিনটি সুসজ্জিত রথ। যখন এগিয়ে চলবে তখন রথের থেকে একটি রশি রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেডের উপর থাকবে যে রশিতে স্পর্শ করে বা টান দিয়ে ব্যারিকেডের ওপার থেকে আরাধ্য দেবতার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করবেন ভক্তবৃন্দ থেকে দর্শনার্থীরা। দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের মূল পরিচালক তথা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, ” মূলত দুর্ঘটনা এড়াতে বা নিরাপত্তার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। যে পথে জগন্নাথ দেব পরিক্রমা করবেন সেই রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেড করা থাকবে। ব্যারিকেডের দুপাশে দর্শনার্থীরা থাকবেন। রোড থেকে একটি দড়ি ব্যারিকেডের উপর ফেলা থাকবে। সেই দড়ি টেনে নিজেদের মনস্কামনা পূরণ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ব্যারিকেডের ভিতরে রাস্তায় দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন না। সেখানে থাকবেন সাধু-সন্ত ও মন্দিরের সেবাইতরা। তারাই রথকে টেনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”
বুধবার দিঘায় পৌঁছে রথযাত্রা নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই ঠিক হয় মহাকুম্ভের মত ঘটনা অথবা পুরীর রথযাত্রায় পদপিষ্ট হওয়ার মত ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক দুপুর দুটোয় মুখ্যমন্ত্রী দীঘার জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে উপস্থিত হবেন। তারপর শুরু হবে জগন্নাথ দেবের আরতি। আরতি শেষে সূচনা হবে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রথমবারের রথযাত্রা উৎসবের। সোনার ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে এবং রথের মূল রশিতে টান দিয়ে রথযাত্রা সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুসজ্জিত তিনটি রথ জগন্নাথের ‘নন্দীঘোষ’ বলভদ্রের ‘তালধ্বজ’ এবং সুভদ্রার ‘দেবদলন’-এ তিন দেবতা অধিষ্ঠিত হয়েছেন। নির্দিষ্ট আরতির পর সূচনা হবে এ বছরের রথযাত্রা উৎসবের। যদিও রথের মূল রশি তিনি রথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ তথা দর্শনার্থীরা।