কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইতিমধ্যেই তিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি জারি করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। লালবাজারের কাছে ঘটনার রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘাতে রথ যাত্রা পালন করছেন। ফলে তা নিয়েও কটাক্ষের সুর বিরোধীদের মধ্যে।
গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে কসবায় একটি আইন কলেজের মধ্যে দুষ্কর্মটি ঘটে। রাতেই কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তিন অভিযুক্তকেই ধরে ফেলেছে। আদালত তাদের ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সূত্রের খবর, অভিযুক্তেরা ওই কলেজেরই ছাত্র বা প্রাক্তন ছাত্র। সম্প্রতি কলেজের গভর্নিং বডির সুপারিশে ওই কলেজেই অস্থায়ী চাকরি পেয়েছেন একজন। কলেজে পড়ার সময় তিনি ছিলেন টিএমসিপি-র ইউনিট প্রেসিডেন্ট। পড়া শেষ হলেও সম্পর্ক শেষ হয়নি। এবিভিপির দাবি, অন্যতম অভিযুক্ত নাকি ভোট লুট করাতেও ওস্তাদ। এসএফআইয়ের অভিযোগ, এর আগে কম করে ২০টি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। নির্যাতিতা তরুণীকে পদ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। ছাত্রী তাতে মানা করায় রেগে যান নেতা। এর পর বুধবার সন্ধ্যায় ছাত্রীকে কলেজে ডাকিয়ে এনে চলে নির্মম অত্যাচার। পুলিশ সূত্রে খবর, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১১টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে।
এই ঘটনা নিয়ে নেমে পড়েছে মহিলা কমিশন। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রোহতকর সরাসরি চিঠি লিখেছেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মাকে। সেখানে উদ্বেগপ্রকাশ করে বিজয়া দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কী ঘটেছে, তারপর পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, সব জানিয়ে তিন দিনের মধ্যে একটি রিপোর্টও দিল্লিতে মহিলা কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে লালবাজারকে।
কসবায় কলেজের এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই আরজি কর কাণ্ডের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। হামলার কেন্দ্রে ফের সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আরজি করের নির্যাতিতা সেখানে ডাক্তারি করতেন আর কসবার ক্ষেত্রে কলেজটি নির্যাতিতার নিজের। ইতিমধ্যেই পথে নামার প্রস্তুতি শেষ বিরোধীদের। বামেদের এসএফআই এবং দক্ষিনপন্থী এবিভিপি— দুই পক্ষই টিএমসিপি তথা তৃণমূলের দিকে তুমুল আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রুত পথের কর্মসূচিও ঘোষণা করবে দুই শিবিরই। সব মিলিয়ে, মমতা যখন দিঘায় রথ যাত্রায়, তখন নতুন বিক্ষোভের আগুন জ্বলল কলকাতায়।