সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
সরকারি কর্মীদের বকেয়া ২৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা(ডিএ) মেটাতে আরও ছয় মাস সময় চাইল রাজ্য সরকার। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার নির্দেশনামার কিছুটা বদল চেয়ে মডিফিকেশন পিটিশন দাখিল করে জানায়, ডিএ সংক্রান্ত নির্দেশ কার্যকর করতে ছ’মাস সময় দরকার।
রাজ্যের তরফে জানানো হয়, চলতি অর্থবর্ষে এই পরিমাণ অর্থ মেটানোর মতো বাজেট বরাদ্দ নেই। তাই ডিএ দেওয়ার শীর্ষ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে ছ’মাস অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। একই সঙ্গে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে যদি আদালতের নির্দেশ মোতাবেক এই বকেয়া ডিএ রাজ্যকে দিতে হয় সেক্ষেত্রে আদালতের কাছেই সেই টাকা গচ্ছিত রাখা হোক। কারণ এই ২৫ শতাংশ ডিএ দিতে রাজ্যের কোষাগার থেকে প্রায় সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা গুনতে হবে। এই বিপুল পরিমাণ টাকা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হলে সেই টাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। কারণ এই মামলায় যে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী ডিএ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় এই কথা উল্লেখ করেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে মামলার চূড়ান্ত রায়দান না হওয়া পর্যন্ত আদালতের কাছেই এই টাকা গচ্ছিত রাখার আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার। উল্লেখ্য, রাজ্যের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছে, যেহেতু কেন্দ্র বা অন্যান্য রাজ্যের আয়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আয়ের সমতা নেই সেক্ষেত্রে রাজ্যকে তার নিজস্ব আয় কাঠামো অনুযায়ী ডিএ দিতে হবে। এজন্য রাজ্য সরকারকে বহু পরিমাণ ঋণ নিতে হবে যে ঋণের টাকা পাওয়া সময়সাপেক্ষ। যদিও সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলে এদিনও সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এই যুক্তির ভিত্তিতেই রাজ্যের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে ছয় মাসের সময় মেয়াদ চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন অভিজ্ঞ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তিনি দাবি করেন, ডিএ কোনও “অধিকার” নয়। কিন্তু বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং মনোজ মিশ্র-র ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, “ডিএ যদি অধিকার না-ও হয়, দিনের পর দিন টাকা আটকে রাখা যায় না। ন্যূনতমটুকু তো দিতেই হবে।”
শীর্ষ আদালত গত ১৬ মে নির্দেশ দিয়েছিল, চার সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সময়সীমা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু এখনও ডিএ হাতে পাননি রাজ্য সরকারি কর্মীরা। এ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। এই মুহূর্তে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ-র মধ্যে ৩৫ শতাংশ ফারাক রয়েছে। এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ রয়েছে।