দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ই মেইল মারফত চিঠি দিল ‘অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স ইউনিয়ন’। শনিবারই কলকাতা হাই কোর্টের এক আইনজীবী সৌম্যশুভ রায়ও একই আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রশ্ন বিচারপতির কাছে।
আইনজীবী সংগঠনের সম্পাদক আইনজীবী শামিম আহমেদ প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলেন, ২৫ জুন দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজে এক প্রথম বর্ষের ছাত্রী কলেজে গিয়ে পরীক্ষার ফর্ম জমা দিতে গিয়ে ভয়াবহ যৌন হেনস্তার শিকার হন। অভিযোগ, কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ও তাঁর সহযোগীরা ওই ছাত্রীকে প্রথমে ইউনিয়ন রুমে আটকে রেখে রাজনৈতিক আনুগত্যে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। তিনি তা না মানায় তাঁকে ভয় দেখানো হয় ও শারীরিক নিগ্রহ করা হয়।
চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, সন্ধ্যা ৭টা ৩০ থেকে রাত ১০টা ৫০ পর্যন্ত ছাত্রীকে কলেজের সিকিউরিটি রুমে আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ কেউ বাইরে পাহারা দিচ্ছিল, আর নিরাপত্তারক্ষী উপস্থিত থাকলেও কোনও হস্তক্ষেপ করেননি। ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ ২৬ জুন, নির্যাতিতা নিজেই কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন (মামলা নম্বর ২৮১/২০২৫)। আইনজীবী সংগঠন চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছে, কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেরা কোনও অভিযোগ জানাল না? কেন তাঁরা এত বড় অপরাধের পরেও চুপ করে থাকল?
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নির্যাতিতার অভিযোগ অনুযায়ী তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং ধর্ষণের ভিডিয়ো তুলে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর মেডিকেল রিপোর্টে বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক, কামড়, আঁচড়, গলায় আঘাত ও অন্যান্য আঘাতের প্রমাণ মিলেছে। চার জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে—প্রধান অভিযুক্ত, দুই ছাত্র ও কলেজের নিরাপত্তারক্ষী। এছাড়াও আইনজীবী সংগঠনটির অভিযোগ, যাঁরা এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে হত্যা-সহ একাধিক গুরুতর ধারায় মামলা রুজু করেছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘সবচেয়ে বিস্ময়কর, এফআইআরে অভিযুক্তদের নাম গোপন রাখা হয়েছে।’ আইনজীবী সংগঠনটি বলেছে, আইন অনুযায়ী শুধু নির্যাতিতার পরিচয় গোপন রাখা উচিত, কিন্তু অভিযুক্তদের নাম আড়াল করে তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। এই প্রেক্ষিতে আইনজীবী সংগঠনটির দাবি, প্রথমত, হাই কোর্ট যেন এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করে। দ্বিতীয়ত, পুলিশের তদন্ত যেন আদালতের পর্যবেক্ষণে চলে। তৃতীয়ত, প্রয়োজনে আদালত-নিয়ন্ত্রিত একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হোক। চতুর্থত, নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক। পঞ্চমত, কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তা কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হোক।
চিঠিতে আইনজীবী সংগঠনটি জানিয়েছে, এই নৃশংস অপরাধ শুধু একজন নারীর উপর আক্রমণ নয়, বরং এটি দেশের সংবিধান, শিক্ষার পরিবেশ, এবং আইনের শাসনের উপর সরাসরি আঘাত। আইনজীবী সংগঠনটির সম্পাদক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, “এই ঘটনার সুবিচার না হলে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও নারী নিরাপত্তা সবই প্রশ্নের মুখে পড়বে। হাই কোর্টের উচিত অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”
Leave a comment
Leave a comment