মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর বার-বার ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বা মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই)-এর অর্থ হল কিডনির সর্বনাশ। যদি দেখা যায় মেনোপজের পর কেউ ৬ মাসে একবার অথবা বছরে ৩ বার ইউনারি সংক্রমণে ভুগছেন তাহলে তাঁর দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নাহলে তৈরি থাকুন কিডনির নানান সমস্যায় ভোগার জন্য।
সাধারণত বেশ কিছু মহিলার ক্ষেত্রে মেনোপজের পর ইউটিআই-এর সমস্যা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। কানাডার মেনোপজ ফাউন্ডেশনের করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সেখানকার ৮২শতাংশ মহিলা জানেনই না যে মেনোপজের সঙ্গে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এবং এতে কিডনি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, গোটা বিশ্বে প্রতিবছর ১৫ কোটি মানুষকে ইউটিআই-এর সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। এদের মধ্যে ৮ ০শতাংশ ভুক্তভোগী হলেন মহিলা। এমনকি ইউটিআই সমস্যার কারণে প্রতিবছর ২লক্ষ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে ।
চলুন তাহলে জেনে নিই, মেনোপজের পর মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই-এর সমস্যা কেন বৃদ্ধি পায় এবং কীভাবে এর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
৪০-এর পর কেন বারবার
সাধারণত মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৬-৩৫ বছর বয়সকালে এই সমস্যা মাঝেমধ্যে দেখা দিতে পারে। তবে ৪০ পার করার পর এটি যদি ক্রমাগত ফিরে আসতে শুরু করে তাহলে তা চিন্তার বিষয়। কারণ এই সময় মেনোপজের কারণে মহিলাদের শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়।
মেনোপজের পর ইউটিআই বেশি কেন ?
মেনোপজের পর ইউটিআই বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ হয় ইস্ট্রোজেন লেভেলে ঘাটতি। ইস্ট্রোজেন ইউরিনারি ট্রাক্টের টিসুগুলিকে সুস্থ রাখতে ভীষণ ঘুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইস্ট্রোজনের লেভেল যেমন যেমন কম হতে থাকে ঠিক সেভাবেই ইউরিনারি ট্রাক্টের লেয়ার পাতলা এবং দুর্বল হতে শুরু করে। যে কারণে ইউরিনারি ট্রাক্ট-এ সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করা রক্ত কোশও কম হতে শুরু করে।
তবে মেনোপজ ছাড়াও ইউটিআই সংক্রমণের বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে মূত্রাশয়ের পেশিগুলি দুর্বল হতে শুরু করে, পেলভিস অর্গানস একটু আগের দিকে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যে কারণে মুত্রাশয় একদম খালি হতে পারে না। যে কারণে ইউরিন থেমে যায় এবং ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির আশংকা দেখা দিতে শুরু করে।
ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স এবং সেক্স্যুয়াল এক্টিভিটিজও কারণ হতে পারে
বয়েস বৃদ্ধির সঙ্গে বেশ কিছু মহিলার ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের সমস্যাও দেখা দিতে শুরু করে। ইউরিন ইনকন্টিনেন্সের কারণে প্যাড বা আন্ডারওয়ারের ভেজা ভাব ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম দেয়। শারীরিক সম্পর্ক সরাসরি ইউটিআইএর কারণ না হলেও এটি ইউরিন ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশের কারণ হতে পারে। যার ফলে সংক্রমণের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি ইউটিআই আক্রান্ত ?
বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইউরিনে ব্যাক্টেরিয়া থাকলেও তার লক্ষণ প্রকাশ পায়না। এমন ব্যাকটেরিয়াকে অ্যাসিম্পটোমেটিক ব্যাক্টেরিয়া বলা হয়। এটি কিন্তু ইউটিআই নয়, চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। ইউটিআই হওয়ার অর্থ হল ব্যাক্টেরিয়া এবং লক্ষণ দুটোই দেখা দেবে। ঘন-ঘন প্রসাব কিন্তু পুরো প্রসাব না হয়ে থেমে যাওয়া, মূত্রনালীতে জ্বালা, ব্যথা, খিটখিটে ভাব, খাদ্যে অরুচি দেখা দিলে বা বেশ কিছু দিন ধরে চললে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এই সমস্যা সোজাসুজি আপনার কিডনিকে প্রভাবিত করে। যার ফলে পরবর্তীতে কিডনির জটিল সমস্যায় দেখা দিতে পারে।