ক্রমেই কী ইউনূসে আস্থা হারাচ্ছে বাংলাদেশ? শেখ হাসিনার বিদায়ের পর যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল সেই সোনালী দিন যে এত তাড়াতাড়ি ফিকে হয়ে আসবে তা বোধহয় ভাবতেই পারে নি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।গত বছর জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদল শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় মুহাম্মদ ইউনূসকেই বসিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে। নোবেল বিজয়ী হিসেবে একটা সম্মানজনক জায়গার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সরব ছিলেন তিনি। তাই তাঁকে মাথায় করেই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল। অথচ সেই ইউনূসকেই এখন ‘সুবিধাবাদী ইউনূস’ বলছেন অভ্যুত্থানকারীরা।তাঁর শপথের দিন ৮ অগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করায় চরম বিতর্ক তৈরি হয় ওপার বাংলায়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ স্তরে থাকা হাসনাত আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘৫ অগস্টের সাধারণ ছাত্র–জনতার অর্জনকে সরকারের কুক্ষিগত করার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।’ অন্য নেতা সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন যে ৮ অগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা শুরু হয়নি।শেখ হাসিনের গদি ছাড়ার দিন ৫ অগস্টকেই ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে মান্যতা দিতে চান তারা।‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও প্রবল সমালোচনা করেছে ইউনূসের। আর এভাবে হাওয়া উল্টো দিকে ঘোরায় ৮ অগস্ট নতুন বাংলাদেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন মহম্মদ ইউনুস ।
ভোটের দিন ঘোষণা নিয়েও যথেষ্ট জলঘোলা হচ্ছে বাংলাদেশে।সংস্কারের নামে ইউনূসই বাংলাদেশে ভোট পিছিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকারের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট কোনও বার্তা না দেওয়ায় এ নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। নির্বাচনের সময় নিয়ে যে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তা লন্ডনে ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর মিটে গেছে বলেই দাবি করেছিল খালেদা জিয়ার দল। যদিও দেশের বৃহত্তম দল বিএনপির চাপেই লন্ডনে ইউনূসকে নির্বাচনের দিন নিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে খেলতে হয়েছিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
নানা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটার পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারেও নাজেহাল দশা ইউনূস প্রশাসনের। দু’দিন আগে কুমিল্লায় এক হিন্দু তরুণীকে ধরে ঢুকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর বরিশাল থেকে এক হিন্দু মহিলাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হাইওয়ের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে তাঁর দেহের অর্ধেক অংশ অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরে ফের প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশে হিন্দু মহিলাদের নিরাপত্তা। শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বাংলানিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কম অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস – এর তথ্য দিয়ে দেখিয়েছে যে এ বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স-জিপিআই, শান্তিসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নমুখী।এই সূচকে গতবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের শান্তি সূচকে ২.৩১৮ স্কোর নিয়ে ১২৩তম স্থানে। গত বছর ১৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৯৩তম স্থানে। অর্থাৎ সোজা হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের আমলেই শান্তি সূচকের অবনতি যাকে সংবাদমাধ্যমে বেমানান ও অসম্মানের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো ইউনূস প্রশাসনে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি অনাস্থা বাড়ছে সাধারণ মানুষেরও।
Leave a comment
Leave a comment