নির্বাচন কমিশনের থেকে সবুজ সংকেত পেলেই চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসেই বঙ্গে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন বা SIR শুরু করতে প্রস্তুত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। কমিশন সুত্রে এমনটাই জানা গেছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ও তৃণমূলের দাবি উপেক্ষা করেই ভোটার তালিকা নিয়ে এই বিশেষ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চায় কমিশন।
কার্যত কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচঙ্কে রোল মডেল করে ইতিমধ্যে বিহারে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন এর কাজ চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। ঠিক একইভাবে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকার এই বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু করতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। এরাজ্যে শেষবার এ ধরনের রিভিশন হয়েছিল ২০০২ সালে। তাই ২০০২ সালকে বেস ইয়ার বা ভিত্তি ধরে নিয়ে এই বিশেষ রিভিশনের কাজ শুরু করতে চায় কমিশন।
প্রসঙ্গত, কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনেও নতুন করে ভোটার তালিকার সংশোধন করে প্রায় ৫ হাজার ৮৪০ জন ভোটারের নাম তালিকা বাদ দিয়েছিল কমিশন। পক্ষান্তরে, তিন হাজারের বেশি ভোটারের নাম নতুনভাবে যুক্ত হয়। মূলত, নতুন প্রজন্মের ভোটার, ভোটারদের স্থানান্তর, মৃত ভোটার, ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড নম্বর ইত্যদি নানা কারণে এই সংযোজন ও বিয়োজন হয় ভোটার তালিকায়। একইভাবে বিহারের আসন্ন নির্বাচনেও ভোটার তালিকার এই বিশেষ রিভিশন করার কাজ চলছে।
এবার কমিশনের পাখির চোখ আগামী বছরে নির্বাচন হতে চলা পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্যেও। এমনকি ভোটার তালিকা এই স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিউ করতে গিয়ে যদি কোন বুথ লেভেল অফিসার বা সমীক্ষকরা কোনোভাবে আক্রান্ত হন সে ক্ষেত্রে সরাসরি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করার অধিকার দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক জেলা নির্বাচনী আধিকারিক ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরকে।
ইতিমধ্যেই এরাজ্যে এই স্পেশাল রিভিশন করা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি-র মত ভোটার তালিকাতেও এই বিশেষ কর্মসূচির নামে যোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার কাজ করছে নির্বাচন কমিশন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিশনকে ” বিজেপির এজেন্ট ” বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। এখানেই শেষ নয়, দিল্লিতে পাঁচ সদস্যের তৃণমূল প্রতিনিধিদল দেশের মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে পশ্চিমবঙ্গে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী না করতে অনুরিধ করেন।
অন্যথায় ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের ভোটার তালিকা মেনেই এই স্পেশাল রিভিশনের কাজ করার আবেদন জানানো হয়। এছড়াও ভোটের বুথের কাজে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ব্যবহার, ভোট ঘোষণার পর রাজ্যপালের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক দাবিদাওয়া মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে পেশ করা হয়। যদিও রাজ্যের শাসকদলের এই আবেদনগুলি বিবেচনার আশ্বাস দিলেও কার্যক্ষেত্রে ভোটার তালিকার স্পেশাল রিভিশনের বিষয়ে যে কোনও সমঝোতা করতে রাজি নয় কমিশন তা একপ্রকার নিশ্চিত। বরং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরকে স্পেশাল রিভিশনের কাজ শুরু করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।
