সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়: আচমকা উড়ো ফোন! বোমাতঙ্ক! তড়িঘড়ি ছুটছে বম্ব স্কোয়াড, স্নিফার ডগ। বিমানবন্দর থেকে জাদুঘর, পরিত্যক্ত এলাকা থেকে জনবহুল বাজার। এই ছবি আমাদের পরিচিত।
এবার বম্ব স্কোয়াডকে আরও উন্নত ও চাঙ্গা করতে তৎপর লালবাজার। কলকাতা পুলিশের বম্ব স্কোয়াডের আধুনিকীকরণে আনা হচ্ছে বিশেষ যন্ত্র। যন্ত্রটির নাম ‘এক্সপ্লোসিভ ভেপার ডিটেকশন’ বা ইভিডি। অত্যাধুনিক এই যন্ত্র কিনতে চলেছে লালবাজার। এই যন্ত্রের মাধ্যমে জানা যাবে কী ধরণের বিস্ফোরক রয়েছে সেখানে। বিস্ফোরণ হলে কতটা কী ক্ষতি হতে পারে, এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে এই যন্ত্রের মাধ্যমে। কোনও জায়গায় বোমা রাখা হলে তা থেকে গন্ধহীন একরকমের অদৃশ্য রাসায়নিক গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাস থেকে বোমা সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
এই বিশেষ যন্ত্রের বিশেষত্ব কি ? লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে , ১ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত সূক্ষ্ম বিস্ফোরক চিহ্নিত করতে পারবে এই ইভিডি। ১ গ্রাম বিস্ফোরককে ১০০ কোটি ভাগে বিভক্ত করলে, প্রতি ভাগকে ১ ন্যানোগ্রাম বলা হয় অর্থাৎ সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম রাসায়নিক বাষ্পকেও চিহ্নিত করতে পারবে ইভিডি। বাষ্প, কণা, তরল সহ যেকোনও অবস্থায় জৈব বা অজৈব বিস্ফোরক চিহ্নিত করতে পারবে ইভিডি। (-)১০ ডিগ্রি ঠান্ডা হোক বা ৫৫ ডিগ্রী পর্যন্ত গরম, স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে এই যন্ত্র।
মাত্র দুই কেজি ওজনের এই যন্ত্র একজনই সামলাতে পারবেন। যন্ত্রের উপরে রয়েছে একটি দুই ইঞ্চির এলইডি ডিসপ্লে। সন্দেহজনক বস্তুর দুই মিটারের মধ্যে এই যন্ত্র নিয়ে গেলেই ডিসপ্লেতে দেখা যাবে বিস্ফোরকের নাম, এছাড়াও এই যন্ত্রে থাকছে স্পীকারও। ডিজিটাল স্ক্রিনে তথ্য দেখার পাশাপাশি বিস্ফোরকের নামও শোনাবে ইভিডি। ‘রিয়েল টাইম ডিটেকশন’ অ্যানালিসিস ধরা পড়বে স্ক্রিনেই। কী ধরণের বিস্ফোরক, কতটা রয়েছে, কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব কিনা- এরকম যাবতীয় তথ্য সবটাই জানিয়ে দেবে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র। কলকাতা পুলিশের কাছে এই যন্ত্র প্রথম আসছে সুতরাং এটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, সমস্ত তথ্য ইভিডি-র ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ব্যাগ বা অন্যান্য বস্তু রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এই সব ক্ষেত্রে বম্ব স্কোয়াড পৌঁছে দেখেছে তেমন কোনও বোমা ঘটনাস্থলে নেই। সেক্ষেত্রে এই যন্ত্র থাকলে ২ মিটার দূর থেকে বোঝা যাবে যে আদৌ সেটি বোমা কিনা, বোমা হলে কী ধরণের বোমা বা তার যাবতীয় তথ্য।
এই সব ক্ষেত্রে আগে থেকেই সচেতন হতে পারবে বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা। বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা যাবে। প্রাথমিকভাবে দুটি যন্ত্র কেনা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে। যার দাম আনুমানিক ৬০ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই টেন্ডার ডাকা হয়েছে লালবাজারের তরফে। বিভিন্ন সংস্থার নমুনা দেখে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে কেনা হবে এই যন্ত্র। যন্ত্র কেনার আগে ডেমো সেশন শুরু করবে বলেই লালবাজার সূত্রে খবর।