সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
সরকারি টাকা কি কর্পূর? যে মাঝপথ থেকে উবে যাবে? রাজ্যের অর্থ দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকে দাঁড় করিয়ে এই প্রশ্নের জবাব চাইলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। সিএসটিসি কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড সংক্রান্ত আদালত অবমাননা মামলায়এই প্রশ্নের উত্তর চাইলেন বিচারপতি মুখোপাধ্যায়। এই অবমাননা মামলায় শুক্রবার আদালতে হাজিরা দেন রাজ্যের অর্থ দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব প্রভাত মিশ্র, সিএসটিসি-র এম ডি এবং রাজ্য পরিবহন নিগম ও সিএসটিসি এমপ্লয়ী ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র। যে ১৭ জন পিটিশনার এই আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন ইতিমধ্যেই তাদের টাকা রাজ্য অর্থ দফতর পরিবহন দফতরের মাধ্যমে সিএসটিসি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও গত এক বছর ধরে বহু পরিবহন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের আদালত অবমাননার মামলা এখনো বিবেচনাধীন। সব মিলিয়ে প্রায় ২৮৬ কোটি টাকার প্রভিডেন্ট ফান্ড বকেয়া রয়েছে সিএসটিসি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের। যদিও আদালতে রাজ্যের অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব প্রভাত মিশ্র রাজ্য পরিবহন দফতরের কাজের সমালোচনা করে জানিয়েছেন,”এ ব্যাপারে পরিবহন দফতর যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করে না। সব বিষয়ে যদি অর্থ দফতরকে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে পরিবহন দফতরের ভূমিকা কি? আমি নিজে একমাস আগে এই বিষয় নিয়ে পরিবহন সচিবের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু অদ্যাবধি তার কোন জবাব মেলেনি।” যদিও অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাবতীয় টাকা নির্দিষ্ট খাতে অর্থ দফতর পরিবহন দফতরকে পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে নির্দিষ্ট খাতে তাদের হাতে টাকা না পৌঁছনোয় প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। বিচারপতির প্রশ্ন “অর্থ দফতর সমস্ত টাকা নির্দিষ্ট খাতে রিলিজ করে দেওয়ার পরও সেই টাকার হদিশ মিলছে না কেন? সরকারি টাকা কি কর্পূর যে উবে যাবে? এভাবে চলতে থাকলে তো এই সমস্যা আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। জটিলতা আরও বাড়বে। অবিলম্বে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা উচিত।” আপাতত হাইকোর্ট সিএসটিসি-র অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সমস্ত বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা চার মাসের মধ্যে প্রসেস করার জন্য সময় দিয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্য অর্থ দফতরের অতিরিক্ত সচিব প্রভাত মিশ্রকে আলাদা করে দায়িত্ব নিতে বলেছে আদালত। কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সাথে সমন্বয় সাধন করে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্যের অর্থ দফতরের অতিরিক্ত সচিব বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। রাজ্যের অর্থ দফতরের অতিরিক্ত সচিব প্রভাব মিশ্র বিচারপতিকে জানান ” রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সমন্বয় সাধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে অবসর নেওয়া পরিবহন কর্মীরা এখনো পর্যন্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা না পাওয়ায় হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ১৭ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। সেই মামলায় আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য অর্থ দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব, সি এস টি সির এমডি এবং প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্রকে হাজিরা নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। মূলত এই তিন পক্ষকে সামনে রেখে কোন পথে সমস্যার সমাধান সম্ভব এদিনের শুনানিতে সেই চেষ্টায় করেন বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। প্রাথমিকভাবে অর্থ দফতরের এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আইনজীবী আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করলে বিচারপতি বলেন “বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘সবকিছুই ফাঁকা আসল হল টাকা’। অর্থ দপ্তরকে বাদ দিয়ে টাকার সমস্যা মিটবে কি করে?” অবশেষে অর্থ দ দফতরকেই ক্রমবর্ধমান বকেয়া সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব দেন বিচারপতি মুখোপাধ্যায়।