খাস নিজের বিধানসভা এলাকাতেই বিক্ষোভের মুখে রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তাঁকে লক্ষ্য করে কালো পতাকা দেখানো, এমনকী গাড়ি ভাঙচুর পর্যন্ত হয়। আর এই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ সিদ্দিকুল্লাহ। শুধু তাই নয়, দলের গোষ্ঠীকোন্দলের ফলেই যে এই ঘটনা তাও তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে। এমনকী বিস্ফোরক দাবি করে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘খুনের’ ছক কষা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, গোটা ঘটনার দায় মন্তেশ্বরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহম্মদ হোসেন শেখের উপরেই চাপিয়েছেন। একই সঙ্গে মন্তেশ্বর থানার আইসির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন।
সামনেই ২১ জুলাই। তৃণমূলের শহিদ স্মরণ সভায় এবার রেকর্ড ভিড়ের আশায় নেতৃত্ব। আর এই ২১ জুলাইকে সামনে রেখে মন্তেশ্বরের মালডাঙ্গায় প্রস্তুতি সভা ডাকা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মন্তেশ্বরের মালডাঙ্গা সভাস্থলের দিকেই যাচ্ছিলেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। সেই সময় চরম বিক্ষোভের মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। প্রথমে একদল উন্মত্ত জনতা মন্ত্রীর কনভয় আটকায়। পরে তাদের মধ্যে কেউ হাতে কালো পতাকা, আবার কেউ হাতে ঝাঁটা নিয়ে মন্ত্রীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। এমনকী ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও উঠতে থাকে।
কেউ কেউ আবার রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ‘চিটিংবাজ’- ‘ধাপ্পাবাজ’ বলেও তোপ দাগেন। যা নিয়ে তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে যান মন্ত্রী। আর এরমধ্যেই গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। এছাড়াও মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সদস্য আজিজুল হকের গাড়ি সহ আরও দুটি গাড়িতে বেপরোয়া ভাঙচুর চালানো হয়।
উত্তেজিত জনতার দাবি, বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গত চার বছর ধরে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এলাকার কারও খোঁজখবর রাখেননি। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েও মন্ত্রী মশাই তার বাস্তবায়ন করেনি। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে ‘ভোটপাখি’ বলেও কটাক্ষ করেন বিক্ষোভকারীরা। এই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বিকেলেই ছুটে যান জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাসের কাছে।
পুলিশ সুপারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ’দল’ ছাড়ার হুমকি দেন। পাশাপাশি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, “আমাকে কালো পতাকা দেখানোর পাশাপাশি আমার উপর আক্রমণ হয়েছে। গাড়ির কাঁচ ভাঙা হয়েছে’। মন্ত্রীর ঘটনায়, ঘটনায় আমি আহত হয়েছি। শুধু তাই নয়, মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে বলেও বিস্ফোরক দাবি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর।
পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে এদিন পুলিশের বিরুদ্ধের একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী সুরক্ষিত নয়, সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে সুরক্ষিত থাকবে। শুধু তাই নয়, পরিকল্পনা করে আমাকে ‘খুনের’ চক্রান্ত করা হয়েছিল বলেও দাবি মন্ত্রীর। ইতিমধ্যে পুরো ঘটনা বিস্তারিত দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা না নিলে দল ছাড়বেন বলেও হুঁশিয়ারি।
পাশাপাশি আগামী ১০ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার কলকাতায় প্রতিবাদ কর্মসুচীরও ডাক দিয়েছেন মন্ত্রী। হামলার ঘটনায় এই প্রতিবাদ কর্মসূচি বলেও দাবি তাঁর। উল্লেখ্য, এদিন অনেক চেষ্টা করেও ফোনে মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহম্মদ হোশেন শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক বিতর্ক। তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে বিজেপি। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, মন্তেশ্বরের ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস দলে ’মাৎসন্যায়’ শুরু হয়ে গিয়েছে।