নয়া অধ্যায়ের সূচনা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। বালা সাহেব ঠাকরে যা পারেননি, তা করে দেখালেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর একমঞ্চে দেখা গেল দুই ভাইকে। তাঁরা হলেন শিবসেনা ইউটিবির নেতা উদ্ধব এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার রাজ ঠাকরে। সম্পর্কে দুজনে জ্যাঠতুতো-খুড়তুতো ভাই। আজ শনিবার দুজনকে একমঞ্চে পাশাপাশি বসতে দেখা গেল। হিন্দি ভাষার দাপট রুখতে এবং মারাঠি ভাষা সংরক্ষণের দাবিতে মুম্বইয়ে একটি র্যালির ডাক দেওয়া হয়। সেখানেই দুই ভাইকে পাশাপাশি বসতে দেখা যায়।
যে ছবি দেখার জন্য দীর্ঘ দু’দশক অপেক্ষা করেছেন সে রাজ্যের মানুষ। তবে এর কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসকেই দিয়েছেন রাজ ঠাকরে। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মহারাষ্ট্র যে কোনও রাজনীতি এবং লড়াই’য়ের থেকে অনেক বড়। আর তাই ২০ বছর পর আমি এবং উদ্ধব একসঙ্গে এসেছি’। আর এর কৃতিত্ব মহারাষ্ট্রের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে রাজ ঠাকরের কটাক্ষ, “যা বালা সাহেব করতে পারলেন না, তা দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ করে দেখালেন। আমাদের দুজন (পড়ুন-রাজ এবং উদ্ধব ঠাকরে)-কে একসঙ্গে আনলেন”।
ইউটিউবেও জাজবাত, আপডেট থাকুন আমাদের সঙ্গে
সেই সময় র্যালিতে কয়েক হাজার মানুষের ভিড়! রাজ ঠাকরের এহেন বক্তব্যের পরেই কর্মীদের হাততালিতে ভরে যায় গোটা সভাস্থল। রাজনীতির কারবারীদের মতে, দুই ভাইকে মেলাতে ফড়ণবীশ সরকারের নীতির যেমন ভূমিকা আছে, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও প্রভাব রয়েছে। বিশ্লেষকদের কথায়, গত বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দি আগ্রাসনকে রুখতে বাঙালি সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগায় শাসকদল তৃণমূল। ‘বাংলা তাঁর নিজের মেয়েকে চায়’, এই স্লোগানকে হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে নামে।
শুধু তাই নয়, বিজেপি নেতাদের বহিরাগত তকমা দিয়ে লাগাতার আক্রমণ শানাতে থাকেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এমনকী বাংলায় এসে মোদী, শাহ সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের হিন্দিতে রাখা বক্তব্যকেও ‘ভাতে মাছে’ বাঙালির সামনে হাতিয়ার করে শাসকদল। আঞ্চলিক ক্ষমতায়নকে প্রধান্য দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
মহারাষ্ট্রের মানুষের উপরে হিন্দি ভাষাকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বিজেপি সরকারের কাছে ‘বুমেরাং’ হয়েছে বলেই মত রাজনৈতিকমহলের। রাজ ঠাকরে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়ে আরও বলেন, হঠাৎ করে হিন্দির উপর কেন জোর দেওয়া হচ্ছে? ভাষার প্রতি প্রেম নাকি জোর করে এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা? প্রশ্ন তোলেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা প্রধান। তাঁর কথায়, আমাদের উপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যা কোনোদিনই মানব না।
এই বিষয়ে রাজ ঠাকরে বালা সাহেব ঠাকরে এবং তাঁর বাবা শ্রীকান্ত ঠাকরের প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, তাঁরা দুজনেই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু মারাঠা ভাষাকে ছাড়েননি। এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ ভারতের উদাহরণও তুলে ধরেন রাজ ঠাকরে। বলেন, স্ট্যালিন, কানিমোঝি, জয়ললিতা, এন. লোকেশ সবাই ইংরেজি মাধ্যম থেকে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের ভাষার প্রতি প্রেমের সঙ্গে কোথাও কোনও সমঝোতা করেননি তাও এদিন বুঝিয়ে দেন।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পথে নামারও হুঁশিয়ারি দেন উদ্ধব ঠাকরে। বলেন, ‘ভাষার প্রসঙ্গে আমি, রাজ সবাই একজোট’। জোর করে হিন্দি আগ্রাসন যে মানবেন না তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন শিবসেনা ইউটিবির নেতা উদ্ধব।