বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম বাগুনি! একেবারে প্রত্যন্ত এলাকা। বেশির ভাগই দরিদ্র মানুষের বসবাস। সেই গ্রামই হালে ‘এক কিডনির গ্রাম’ বা ‘ওয়ান কিডনি ভিলেজ’ নামে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। এখানে বহু মানুষ থাকেন যাদের একটি করে কিডনি। কেমন সেই সংখ্যা? জানা যাচ্ছে, প্রতি ৩৫ জনের মধ্যে একজন তাঁর নিজের কিডনি বিক্রি করেছেন। আর এই ঘটনায় রয়েছে ভারত-যোগও। ‘আল জাজিরা’র একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, নিয়ম-আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলে অবৈধ ভাবে অঙ্গ পাচার! সক্রিয় দালালেরা। আর তাদের খপ্পরে পড়ে গ্রামের অনেক পরিবার বিপন্ন। কিন্তু কী ভাবে এই অঙ্গ পাচার চলছে? কী ভাবেই বা সক্রিয় দালালরাজ?
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
আন্তজাতিক ওই সংবাদমাধ্যম একেবারে সরজমিনে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। সেই গ্রামের অন্যতম প্রবীণ বাসিন্দা, ৪৫ বছর বয়সের সইফুদ্দিন জানিয়েছেন, ২০২৪ সাল। উত্তাল বাংলাদেশ। প্রয়োজন ছিল অর্থের। সইফুদ্দিনের কথায়, ভারতে গিয়ে কিডনি বিক্রি করে এসেছিলাম। এ জন্য আড়াই লাখ টাকা পাই। ‘আল জাজিরা’কে সইফুদ্দিন জানিয়েছেন, তাঁর তিন সন্তান। পরিবারের জন্য একটা ছাদ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোথায় পাবেন টাকা?
সে কারণেই ভারতে এসে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত। তবে আড়াই লাখ টাকা পেয়েও বাড়ি তৈরির স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। শরীর জুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে এখন সইফুদ্দিনকে। হারিয়ে ফেলেছেন কর্মশক্তিও। আগামিদিন কী ভাবে চলবে জানেন না তিনি। তাঁর পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, দালাল বলেছিল সব কিছু ঠিক ভাবে হবে। কিন্তু অপারেশনের পর মেডিক্যাল রিপোর্ট, ওষুধ কিছুই দেওয়া হয়নি। এমন কী পাসপোর্টও গায়েব করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
কী ভাবে চলছে দালালরাজ?
ভারতের ১৯৯৪ সালের ট্রান্সপ্লান্টেশন অফ হিউম্যান অর্গানস অ্যাক্ট (THOA) অনুসারে কিডনি দান শুধুমাত্র নিকট আত্মীয়দের মধ্যে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন নিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হতে পারে। আর সেই সুযোগই নিচ্ছে দালালরা। ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি, নকল কাগজ বানিয়ে দালালরা ডোনারদের রোগীর আত্মীয় হিসাবে দেখাচ্ছে। জাল প্রমাণপত্র, নোটারি সার্টিফিকেট তো আছেই, এমন কী ডিএনএ রিপোর্ট পর্যন্ত নকল তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বড়বড় হাসপাতালদের যোগ আছে বলেও দাবি করা হয়েছে প্রকাশিত খবরে।
শুনুন Jazzbaat24Bangla ‘রেডিও সমাচার’
ওই গ্রামের আরও এক মহিলার বক্তব্য তুলে সংবাদ মাধ্যমের দাবি, ২০১৯ সালে এমন ভাবে এক দালালের খপ্পরে পড়ে কলকাতার এক নার্সিংহোমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করান বাংলাদেশি ওই মহিলা। প্রথমে ৭ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েও দেওয়া হয় তিন লাখ টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু কিছু ক্ষেত্রে লোকেদের চাকরির অজুহাতে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে জালিয়াতি করে অপারেশন করানো হয়। সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই গ্রামে ঘুরলে এমন বহু মানুষকে পাওয়া যাবে যারা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে আজ কাঙাল।
আড়াই লাখে কিডনি কিনে ১৮ লাখে বিক্রি!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালালের বক্তব্য তুলে ধরে ‘আল জাজিরা’ জানাচ্ছে, রোগীপক্ষ একটি কিডনির জন্য ১৮ থেকে ২২ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি থাকেন। কিন্তু কিডনিদাতারা আড়াই থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত পান। বাকি টাকা? ওই দালালের কথায়, হাসপাতাল এবং চিকিৎসকরাও এই টাকার ভাগ নেন। এর সঙ্গে নকল নথি তৈরির খরচ এবং দালালদের ভাগ থাকে বলেও জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
ইউটিউবেও জাজবাত, আপডেট থাকুন আমাদের সঙ্গে
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কিছু ক্ষেত্রে মানুষ অর্থের জন্য অঙ্গ বিক্রি করতে রাজি হন। আবার কিছু ক্ষেত্রে ফাঁসানোও হয়। যদিও এই বিষয়ে এখন বাংলাদেশ অনেক কড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিক। সীমান্তে নজরদারি থেকে ধরপাকড় বাড়ানো হয়েছে অনেক। বহু দালালকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবুও দুঃখ ঘোচেনি বাংলাদেশের এক কিডনি গ্রামের।