সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
দুর্গাপুরের থেকে বীরভূমের সিউড়িতে বিদ্যুতের মাশুলের হার বেশি। এই অজুহাতে সিউড়ি স্টিলের টিএমটি রোলিং রড তৈরির দীর্ঘদিনের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ। এবার সেই কারখানা খোলার উদ্যোগ নিল রাজ্য শ্রম দফতর। ইতিমধ্যেই মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে ডেকে সিউড়ির এই রোলিং আয়রন রড কারখানা খোলার বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। বৈঠকে সরকারপক্ষে মন্ত্রী ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। বিদ্যুতের সমস্যা মেটাতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যের শ্রম মন্ত্রী। এই কারখানাতেই স্পঞ্জ আয়রন তৈরি হয়। সেই স্পঞ্জ আয়রনের গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে মিনি পাওয়ার প্ল্যান্ট কারখানার ভিতরেই তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। একাধিক কারখানা এভাবেই নিজেদের প্রকল্পের ভিতরেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে বিদ্যুতের সুলভ যোগান পাচ্ছে। এই উদাহরণ তুলে ধরে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী কারখানা কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। শ্রমমন্ত্রীর এই প্রস্তাব ও আশ্বাসে আপাতত প্রাথমিকভাবে সায় দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহে শ্রম দফতরের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসতে চলেছে কারখানা মালিক কর্তৃপক্ষ। আপাতত সরকারি উদ্যোগে তিন বছর বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা এই কারখানা খোলার আশায় বুক বেঁধেছে কারখানার কয়েকশ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার।
২০২২ সাল থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির মিকি মেটাল রোলিং আয়রন রড কারখানা। সিউড়ির ইউনিট বন্ধ করে দুর্গাপুরে ইউনিটে উৎপাদন করছে এই স্টিল আয়রন টিএমটি রড কোম্পানি। যুক্তি হিসেবে বিদ্যুতের মাশুলের হার বেশি বলেই জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। মূলত দুর্গাপুর ইকোনমিক জোন হিসেবে স্বীকৃত হওয়ায় সেখানে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ অথবা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিপিএল-এর বিদ্যুৎ মাসুলের হার কম। তুলনায় বীরভূমের সিউড়িতে বিদ্যুৎ মাসুলের হার অনেকটাই বেশি বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। দুর্গাপুরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন বিদ্যুৎ মাসুল গুনতে হয় সিউড়ির ইউনিটকে। ১৯৭২ সালে চালু হওয়া থার্মো মেকানিকাল প্রসেসে তৈরি এক লক্ষ মেট্রিক টন আয়রন টিএমটি রড প্রস্তুতকারক এই কোম্পানি বাম আমল থেকেই দফায় দফায় কারখানার উৎপাদনের কাজ বন্ধ রাখে। শেষবার ২০২২ সালে কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে হাই গ্রেড হট রোল স্টেনলেস স্টিল তৈরির এই কারখানার উৎপাদনে খানিকটা ভাটা পড়ে। এক সময় বিড়লা গোষ্ঠী এই কারখানা সিউড়িতে শুরু করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে বর্তমান মালিকানায় হাত বদল হয়। ২০০৭ সাল থেকেই বেশ কয়েক দফায় কারখানার কাজ বন্ধ করা হলেও ২০২২ সালে বন্ধের পর আর খোলা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মূলত সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর মধ্যস্থতায় এই কারখানাটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয় রাজ্য শ্রম দফতর। মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন উভয় পক্ষকেই শ্রম দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়। শ্রমমন্ত্রীর পৌরহিত্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যে বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। মূলত, স্পঞ্জ আয়রনের গ্যাসের মাধ্যমে কারখানার ভিতরেই মিনি পাওয়ার প্লান্ট তৈরির প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ। সেকারণেই বন্ধ হয়ে যাওয়া হাইগ্রেড হট রোল স্টেনলেস স্টিল তৈরির এই কারখানা ফের খোলার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সিউড়ির শাসকদলীয় বিধায়ক। এক্ষেত্রে স্থানীয় কর্মসংস্থানের বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তিনি। আপাতত আগামী সপ্তাহের বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে কারখানার কয়েকশ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার ও সরকারপক্ষ।