স্নিগ্ধা চৌধুরী
খড়্গপুরের এক শান্ত রবিবার সকাল। চায়ের কাপ আর রাজনীতির তাপে ফেটে পড়লেন দিলীপ ঘোষ। বাকিটা ইতিহাস।’মন্দির তো কারও বাপের নয়’ এই একটি লাইন, যেন রাজনৈতিক ভোকাল বিস্ফোরক! শুধু দল নয়, গোটা বাংলার হিন্দুত্ব রাজনীতির বুকে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন দিলীপ। কে করলো এই প্রশ্ন? কী উদ্দেশ্যে? আর কেনই বা দিলীপ এতটা সোজাসাপ্টা?
সাংবাদিকরা ঘিরে ধরতেই তিনি যেন প্রস্তুত আগ্নেয়গিরি! শান্ত নয়, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি শমিক ভট্টাচার্যের কথা মেনে নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মুখের কথা আর চোখের ভাষা এক নয়!
আর সেই নিয়েই প্রশ্ন, দিলীপ কি আদতে দলভিত্তিক অনুতাপের আগুনে পুড়ছেন?
“আমি প্রতিদিন মন্দিরে যাই। ধর্ম আমার রক্তে। কিন্তু মন্দির কারও সম্পত্তি নয়”এখানেই কাঁটায় কাঁটা। তৃণমূল মুখ্যমন্ত্রীর জগন্নাথ ধামের সফরের পরিপ্রেক্ষিতে দিলীপের এই হিন্দুত্ব-সমতা বার্তা, যেন রাজনীতির মাঠে এক নতুন ঘুঁটি সাজানো।
এদিকে, তাঁর দলীয় গুরুত্ব নিয়ে যেভাবে প্রশ্ন উঠেছে, মোদি সভা, অমিত শাহ সভা, এমনকি নতুন সভাপতির সংবর্ধনায় তাঁর অনুপস্থিতি, তা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “জানি না কেন পার্টি ডাকেনি।”
এই এক লাইনেই যেন জমে থাকা ক্লান্তি, উপেক্ষা আর রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্বের স্পষ্ট ইঙ্গিত। ‘দিলীপবাবু’কে কি বিজেপি এখন ‘ব্যাক বেঞ্চ’-এ পাঠাতে চাইছে? নাকি তিনি নিজেই প্রস্তুত হচ্ছেন নিজের পথে হাঁটার জন্য?
মুসলিম ভোট নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, বাম নেতা অনিল দাসের উপর হামলা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে একহাত, সব মিলিয়ে এই চা চক্রে দিলীপ ঘোষ যেন হয়ে উঠলেন “রাজনৈতিক কবি” স্পষ্ট, কটাক্ষভরা, কিন্তু তলে তলে ব্যথাতুর।
তাঁর কথায় বিজেপি “ধর্মের রাজনীতি” করে না, সংবিধান অনুযায়ী চলে। কিন্তু বাস্তবে তাঁর নিজের কথাতেই উঠে এলো, বাংলায় মুসলিম ভোট বিজেপিকে যায় না, তাই অনেক কিছু পরিস্থিতি নির্ভর।
এই দ্বিধা, এই ছেঁড়া সুর আর এই মেঘলা চোখে গর্জন, সব মিলিয়ে দিলীপ ঘোষ যেন এখন ‘অন্তঃসলিলা আগুন’। নীরব থাকলেও জ্বলছেন, ছাইচাপা আগুনের মতো।
খড়্গপুরের চা চক্র শেষে একটাই প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বিস্ফোরণ কি ফের দিলীপের ‘ঘরে ফেরা’, না কি ‘ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া’র সূচনা?