জীবনে ব্যস্ততা যত বেড়েছে, মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ততই নানা পথে হেঁটেছে। আর সুস্থ জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ খাদ্যাভ্যাস। অনেকেই একাধিক পরিচিত খাদ্যদ্রব্য এড়িয়ে তার বদলে গুণসম্পন্ন অন্য খাবার খেয়ে থাকেন। যেমন চিনির বদলে জাগেরি পাউডার বা সাধারণ নুনের বদলে হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্ত প্রতিস্থাপক খাদ্যবস্তুর সঠিক গুণাগুণ বিচার না করেই আমরা তা খাওয়া শুরু করে দিই। হিতে যে বিপরীত হতে পারে তা আমরা অনেক সময়ই পরখ করি না।
হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট। বলা হয় এই নুনের নাকি উপকারিতা অপরিসীম। কিন্তু সম্প্রতি এক চিকিৎসকের মন্তব্য রীতিমতো কপালে ভাঁজ ফেলেছে ‘হেল্থ কনশাস’ মানুষদের। এক ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় চিকিৎসককে বলতে শোনা যাচ্ছে সাধারণ লবণের বদলে নিয়মিত এই গোলাপি নুন ব্যবহার করার ফলে শরীরে তৈরি হচ্ছে আয়োডিনের বিপুল ঘাটতি, যা দেহে থাইরয়েডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত জরুরি উপাদান, এবং সার্বিক স্বাস্থ্য বজায়ও জরুরি।
ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন ডাক্তার আলি কাজ়েমি (গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এবং হেপাটোলজি)। সেখানে তাঁকে ভারতে আয়োডিন ঘাটতির কেসের সংখ্যা বাড়ার কথা বলতে শোনা যায়। তাঁর মতে আয়োডিনে ভরপুর সাধারণ টেবিল নুনের পরিবর্তে হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট ব্যবহারের কারণেই এই সমস্যা এত বেড়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি হিসেবে বলছি, আপনি কি জানেন যে আয়োডিনের ঘাটতি, যা প্রায় নির্মূল হয়ে যাওয়ার পরও, আবার দেখা দিচ্ছে? আংশিকভাবে আয়োডিনযুক্ত টেবিল লবণের চেয়ে হিমালয়ান সল্ট এবং সমুদ্রের লবণের জনপ্রিয়তার কারণে।’ আয়োডিনে পরিপূর্ণ সাধারণ নুনের উপকারিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘থাইরয়েড জনিত রোগ প্রতিরোধে এবং গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য আয়োডিন অত্যন্ত জরুরি। শরীরে আয়োডিনের মাত্রা বজায় রাখতে আয়োডাইজ়ড নুন এবং আয়োডিনে ভরপুর খাবার যেমন মাছ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, সামুদ্রিক খাবার খাওয়া প্রয়োজন।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, চিন, জার্মানি, ভারত, ইতালি, মালয়শিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ বিভিন্ন দেশের ২০,৬৬৬ জনেরও বেশি ব্যক্তির উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগের কারণে মৃত্যুহার হ্রাসে আয়োডিন সাপ্লিমেন্টেশনের গভীর প্রভাব রয়েছে। আয়োডিনে ভরপুর নুন খেলে কী কী উপকার পাবেন? প্রথমত, দেখা গেছে যে গলগণ্ডের ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার কমাতে আয়োডিন সমৃদ্ধ লবণ কার্যকর। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে সাধারণ লবণ। এছাড়া হাইপোথাইরয়েডের হাত থেকে বাঁচায় এই লবণ।