মানব দেহের অবিচ্ছেদ্য অংশ কিডনি। দেহের একাধিক তন্ত্র সচল রাখতে এর অবদান রয়েছে। ফলে কিডনি বা বাংলায় যাকে বলে বৃক্ক, তাকে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি। দেহের দূষিত পদার্থ বের করা, তরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে কিডনি। অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অঙ্গ হলেও, এর স্বাস্থ্য অনেকটা নির্ভর করে আমরা কী খাবার খাচ্ছি তার ওপর। কিন্তু কী খাওয়া উচিত, কোনটা একেবারে না? রইল সন্ধান।
কিডনির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কী কী খাওয়া উচিত?
ফুলকপি। শীতের সবজি হলেও এতে ফাইবার, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকে ভরপুর। এতে পটাসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে যা কিডনির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে, এবং পটাসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে উপকারী। তালিকায় রাখতে পারেন বাঁধাকপিও। এতেও পটাসিয়াম ও ফসফরাস কম পরিমাণে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, এই দুই সবজিই মোটামুটি সস্তা এবং সহজেই রান্না করা যায়। বাঁধাকপিতে প্রচুর ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা কিডনির জন্য উপকারী।
কিডনি সচল রাখতে ব্লুবেরি ও আপেলও খুবই উপকারী। ব্লুবেরিতে সোডিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মাত্রা থাকে কম। ফলে কিডনির সমস্য়ায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের উপস্থিতি প্রদাহ রোধ করে। অন্যদিকে আপেলে পেকটিনের উপস্থিতি রক্তের শর্করা ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পটাসিয়ামের মাত্রা কম থাকে যা কিডনিতে পাথর বা অন্যান্য রোগের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
রেড বেল পেপার, ডিমের সাদা অংশ ও রসুনও কিডনিকে ভাল রাখতে সাহায্য করে। রসুনে প্রদাহ রোধ হয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। রান্নায় রসুন ব্যবহার করলে তা স্বাদ, গন্ধ, দুইই বাড়ায়। পাশাপাশি নুনের মতো শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না, যা কিডনির জন্য ভাল। রেড বেল পেপারে প্রচুর ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিজ্যান্টস থাকে। অন্যদিকে গোটা ডিমে ফসফরাসের মাত্রা অনেকটাই বেশি থাকে। তাই কিডনির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে শুধু ডিমের সাদা অংশই খাওয়া উচিত। এতে প্রোটিনের জোগান পাওয়া যায় যা কিডনিকে ভাল রাখে।
কিডনির স্বাস্থ্য বিগড়ে যেতে পারে কী কী খেলে?
প্রসেসড মিট বা প্রক্রিয়াজাত মাংস। যেমন ধরুন, হট ডগ বা বেকন বা যে কোনও ফ্রোজেন মাংস। খেতে সুস্বাদু হলেও কিডনির জন্য একেবারেই ভাল নয়। এতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, প্রিজারভেটিভ, ফসফরাস থাকে যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এড়িয়ে চলা উচিত ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও ক্যানড স্যুপও।
রঙিন সোডাজাতীয় পানীয় অর্থাৎ কোল্ড ড্রিঙ্কস। গরমের তেজ থেকে বাঁচতে এই পানীয়ের সাহায্য কম বেশি সকলেই নিই আমরা। কিন্তু এর সঙ্গে কত বড় ক্ষতি ডেকে আনছি তা নিজেরাই খেয়াল করি না।
সেই সঙ্গে দুটি জিনিস যা এমনিতে স্বাস্থ্যকর বলে পরিচিত হলেও কিডনির জন্য একেবারেই নয়। অ্যাভোকাডো ও পালং শাক। অ্যাভোকাডো প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। অন্যদিকে পালং শাকে অক্সালেটের মাত্রা প্রচুর যা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
[যদিও এই প্রতিবেদন পরামর্শমূলক। যদি কিডনির সমস্যায় ভোগেন বা কোনও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে মনে হয়, প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।]