বারবার বাদ সেধেছেন বরুণ দেব। দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে প্রথম দুই ঘন্টায় বলই গড়ায়নি পিচে। এর পর ঠিক প্রথম ইনিংসের মতই ফের রুখে দাঁড়িয়েছিল জেমি স্মিথ (৮৮)। কিন্তু ক্রিকেট ঈশ্বর যখন কাউকে ঝুলি উজাড় করে দেবেন বলে ঠিক করেন, তখন তাঁকে আটকাবে কে? প্রকৃতি কিংবা জেমি স্মিথ কেউই তাই শেষ পর্যন্ত পথের কাঁটা হতে পারল না টিম ইন্ডিয়ার। ইংরেজদের ৩৩৬ রানের পর্বতসম ব্যবধানে দুরমুশ করে এজবাস্টনে নয়া ইতিহাস লিখল বুমরাহ্-বিহীন শুভমন গিলের দল।
মহম্মদ সিরাজের আগুন স্পেল প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট থেকে বঞ্চিত করেছিল আকাশ দীপকে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই আক্ষেপ সুদে আসলে মিটিয়ে বাংলার পেসার নিলেন ৬ উইকেট। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট তাঁর পকেটে। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মহম্মদ সিরাজ, রবীন্দ্র জাদেজা এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। এমনকি হাত খালি থাকল না প্রথম ইনিংসের ‘ভিলেন’ প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের। জশপ্রীত বুমরাহ ছাড়াই একটি কমপ্লিট বোলিং প্যাকেজ। তারই সুবাদে টিম ইন্ডিয়া শুধু সিরিজে সমতাই ফেরাল না, ইতিহাসে প্রথমবার এজবাস্টনে টেস্ট জিতে লিখে ফেলল নয়া ইতিহাস।
সেই অর্থে দেখতে গেলে গোটা ম্যাচটি যেন একটি জলজ্যান্ত ইতিহাস বই। এই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১ করে গাভাস্কারের সঙ্গে একাসনে বসেছেন অধিনায়ক শুভমন গিল। আবার এই ম্যাচেই দুই ইনিংস মিলিয়ে ভারত করল হাজারের ওপর রান। যে ঘটনা ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে মাত্র ষষ্ঠবার। আবার রানের ব্যবধানের নিরিখে বিদেশের মাটিতে এটিই ভারতের সর্ববৃহৎ জয়। ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ৩১৮ রানে জয় পেয়েছিল বিরাট কোহলির দল। রবিবারের এজবাস্টনে সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন গিলরা। একটি কমপ্লিট টিম পারফরম্যান্স ছাড়া সম্ভব ছিল না কোনও মতেই।
একদিকে যেমন দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি এবং ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এক মহাকাব্য রচনা করলেন অধিনায়ক গিল। তেমনই ব্যাট হাতে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত জাদেজা, পন্থ, রাহুল, জয়সওয়ালদের। বোলিংয়ে অপ্রতিরোধ্য সিরাজ-আকাশ দীপ। এই না হলে টিম! এই না হলে টিম গেম! ইংল্যান্ড যে শেষপর্যন্ত ২৭১ পর্যন্ত পৌঁছল সেটাই অনেক। যদিও যে ধাক্কা এদিন ব্রিটিশরা খেলেন, লর্ডসে নামার আগে তা কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন, থাকছে সেই প্রশ্নও। গিলের তরুণ দল বার্মিংহামে শুধু জিতলই না বা শুধু ইতিহাসই গড়ল না। দিয়ে গেল এক অশনি সংকেত। নাঃ শুধু ইংল্যান্ড নয়, বাকি দলগুলিকেও।