কারবালার কান্না
রক্তে লেখা ন্যায়
আজকের দিনটা শুধু একটা তারিখ নয়, এটা সময়ের ক্যানভাসে আঁকা প্রতিবাদের প্রতিকৃতি। আশুরা মানে কাঁদা নয়, লড়াই করা। হজরত হোসেনের কারবালা আজো বুক ফাটিয়ে বলে ওঠে, জয় নয়, ন্যায় চাই!
১৪০০ বছর আগের ফোরাত নদীর পাড়ে লেখা হয়েছিল এক এমন গল্প, যেটা রক্তে ভিজে গেছে, তবু আদর্শের পাতা শুকোয়নি। হোসেন তখন একা, তৃষ্ণার্ত, রক্তাক্ত, কিন্তু ভাঙেননি। মাথা নত করেননি। তিনি জানতেন, শরীর শেষ হয়, চেতনা ছড়িয়ে পড়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
মহরমের তাজিয়া তো কেবল কাঠের মণ্ডপ নয়,ওটা ন্যায়ের কফিন, যেখানে সেজে থাকে প্রতিবাদের রূপকথা। আকাশবাতাস হায় হোসেন ধ্বনিতে কাঁপে, কারণ এই শোক শুধু কান্না নয়, চেতনার জাগরণ। মুসলিম সমাজের হৃদয়ে যেভাবে জ্বলছে আশুরা, তা যেন বিশ্বের সমস্ত নিপীড়িতের স্বর হয়ে দাঁড়ায়।
এজিদের ৩০ হাজার সৈন্যের সামনে হোসেনের ৭২ জনের লাল সেনা, এ কোনো হার-জিতের খেলা ছিল না। এটা ছিল অমানবিক শাসনের মুখে মানবিকতার শেষ কণ্ঠস্বর। হোসেনের মৃত্যু তাই মৃত্যু নয়, এক চিরন্তন প্রতিবাদের জন্ম।
আজকের রাজনীতি, সমাজ, ধর্ম সবখানেই ন্যায় চাপা পড়ে যাচ্ছে ক্ষমতার বুটে। তখনই আশুরা মনে করিয়ে দেয়, ভয় নয়, প্রতিরোধই ধর্ম। হোসেন যেন আজও বলে চলেছেন, অন্যায়ের সিংহাসন যতই উঁচু হোক, ন্যায়ের কণ্ঠ তাকে কাঁপিয়ে দিতে জানে।
মহরম মানে শোকের মাস নয়, এটা নীতির দীপ্ত অভিযান। এটা আমাদের মনকে প্রশ্ন করে, তুমি কী করেছ সত্যের জন্য?আশুরা বলে, তুমি একা হলেও, ঠিকের পাশে দাঁড়াও, হোসেন তো পেরেছিলেন।
যে রক্ত কারবালার বালিতে মিশে গেছিল, তা আজ ইতিহাসের শিরদাঁড়া হয়ে বেঁচে আছে। আজকের আশুরা সেই স্পাইনটা আমাদের মনেও চেরা দাগ কেটে দিয়ে যায়, চুপ থেকো না।
মহরম শোক নয়, এক সম্মানিত কান্নার উত্থান। যেখানে চোখের জলও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। যেখানে কারবালার প্রতিটি ধূলিকণাও বলে, আমরা মাথা নোয়াইনি। তুমি কি নোয়াবে?