অভিজিৎ বসু
মুখ তুলেছেন আকাশে দেখছেন আলো। অপুর বিস্ময় নিয়েই দুনিয়া দেখেন তিনি দু চোখ ভরে। এক অদ্ভুত নেশা তাঁর এটা। আকাশের নেশায় আর তারাদের দেশে ঘুরে বেড়াতেই বড্ড ভালোবাসেন তিনি এই মাটির পৃথিবীতে বাস করেও মাটির মানুষদের সাথে। হ্যাঁ, সেই শান্তিনিকেতনের ফল পট্টির আড্ডায় মধুদা আমায় যাঁর সাথে এক সন্ধ্যায় দেখা করিয়ে দিলেন। সেই আমাদের সবার প্রিয় নিখিলেশ দা।
অল্পক্ষণের আলাপ নমস্কার আর প্রতি নমস্কারের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় পর্ব শুরু হলো দুজনের মধ্যে। টেলিস্কোপ তৈরি করেই আর ছাত্র ছাত্রীদের আকাশ দেখানোর নেশা ধরিয়ে যাঁর জীবন কাটে এক অনাবিল সুখের সাগরে ভেসে ভেসে মেঘের রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়ে। সেই শান্তিনিকেতনের সুভাষ পল্লীর ছোট্ট এক চিলতে ঘর, সেই বর্ধমানের গ্রামের বাড়ী, পুকুর, মাঠ, ঘাট ছেড়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো তাঁর। সেই ভাবেই জীবন কাটিয়ে দেওয়া তাঁর এক এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবন নিয়ে। যে জীবনের নিয়ন্ত্রক নন তিনি। তাঁর নেশা শুধু আকাশের মাঝেই ভেসে বেড়ানো তাঁর নিজের মতো করেই।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
অকৃতদার নিখিলেশ দা টেলিস্কোপ তৈরি করেই আর মাটির পৃথিবীতে বাস করা ছেলে মেয়েদের সেই আকাশ দেখানোর নেশা ধরিয়েই গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দিলেন যিনি। সেই একদম অল্প আলাপেই মধুদার মুখে আমার কথা শুনে নিখিলেশ দা বললেন, ভাই এই ফল পট্টির আড্ডায় আসতে হবে কিন্তু তোমায়। দেখবে বেশ ভালো লাগবে কিন্তু তোমার এই আড্ডায় এলে।
আমি এই আড্ডা ছাড়া একদম অচল। সেই কাজের সূত্রে যাঁর হায়দরাবাদ এর বিড়লা তারামণ্ডলে কিছুদিন কাজ করা। তারপর নিজের গ্রাম বর্ধমানের ভাতার ছেড়ে চলে আসা তাঁর এই প্রিয় শান্তিনিকেতনে। একদম নিজের মত করেই বেঁচে থাকা তাঁর। একটা ছোট্টো ঘরে নিজেকে নিয়ে তারাদের দেশে ভেসে বেড়ানোর একটা সংসার নিয়ে বেঁচে থাকা তাঁর অগোছালো ভাবেই। আচ্ছা এমন মানুষও হয়। আমি এটা জেনে অবাক হই বেশ।
সেই নিখিলেশদার সাথে দেখা হলো মধুদার স্মরণ সভায়। কেমন যেনো ভেঙে পড়েছেন তিনি। একদম সেই হাসিখুশি মানুষটা কেমন হয়ে গেছেন যেনো। একটু বুড়িয়ে গেছেন যেনো। চুপ করে একপাশে বসে থাকলেন তিনি সেই স্মরণ সভায়। তারপর ধীরে ধীরে কিছু স্মৃতি চারণ করলেন তিনি। আকাশ পানে তাকিয়ে হয়তো মধুদাকেই খুঁজে বেড়ালেন তিনি একা একাই। একদম খালি চোখে সেই সন্ধ্যায় মধুদাকে খুঁজে পেতে চেস্টা করলেন তিনি।
এই কদিন আগেই মনীষাদির সাথে কথা হলো। বললাম আমায় একটু নিখিলেশদার নম্বরটা দেবেন। তিনি দিলেন সেই নম্বর আমায়। সাথে তাঁর কিছু ছবি আর টেলিস্কোপ এর দুনিয়ায় নিজেকে আটকে রাখার মুহূর্ত। একটু দ্বিধা নিয়েই সেই মোবাইল নম্বর ডায়াল করলাম আমি। বললাম আমি অভিজিৎ বসু। মনীষা দি আমায় আপনার নম্বর দিলেন। ওপর দিক থেকে নিখিলেশ দা কথা বলতে শুরু করলেন। মধুদার কথা, আকাশ কে ভালোবাসার কথা, সেই ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর কথা, সেই সুভাষ পল্লীর বাড়ী যাবার কথা, সেই ২৪ ঘণ্টার ক্যামেরাম্যান আকবরদার কথা, সেই বিখ্যাত সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তর কথা, আরও কত কথাই যে বলে গেলেন তিনি একঘন্টা ধরে কে জানে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন যে জীবনে সুখ আর দুঃখের মাঝে অনাবিল আনন্দে আত্মহারা হয়ে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করেন আমাদের নিখিলেশ দা।
আরও পড়ুন
হ্যাঁ, এটাই হলেন আমাদের নিখিলেশ দা। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় যিনি ধরা দিলেন বহুদিন পর। অনেক চেষ্টা করেই তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে পারলাম আমি। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। একদিন আপনার সেই অগোছালো সংসার দেখতে যাবো আমি। সেই ফল পট্টির আড্ডায় দেখা হবে নিশ্চয়ই। সেই নিখিলেশ পাল যাঁর সাথে আমার আলাপ ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি খুব বেশিদিন। তবু মনে হলো এই ধূলিধুসর পৃথিবীতে বাস করেও যিনি আকাশ জুড়ে বেঁচে থাকেন। মাটিতে পা রেখেও আকাশে ঘুরে বেড়ান সেই মানুষটার কথা কিছু লিখলে ভালো হয়। আর তাই লিখে ফেললাম।আমি আকাশকে ভালোবেসে বেঁচে থাকা এক মানুষের কথা।