আশঙ্কাই সত্যি হল। আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় বিকল হয়ে গিয়েছিল বিমানের দুটি ইঞ্জিনই। শনিবার প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্টে এমনটাই উল্লেখ করল এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB)। ১২ জুনের ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ব্ল্যাকবক্স। সেখানে পাইলটদের কথোপকথন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিকল হয়ে গিয়েছিল বিমানের দুটি ইঞ্জিন। প্রাথমিক তদন্তে তাই চালকদের গাফিলতি ধরা পড়েনি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে প্রাথমিক তদন্তে।
AAIB আরও জানিয়েছে, বিমানের ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ হচ্ছিল না। আচমকাই তা বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পরপর দুটি ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ ‘রান’ থেকে ‘কাট-অফ’ দেখাতে শুরু করে। অর্থাৎ ইঞ্জিনে জ্বালানি আসছে না। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডে ধরা পড়েছে দুই পাইলটের সেসময়ের কথোপকথন। জ্বালানি সরবরাহ থমকে যাওয়ায় এক পাইলট অপর পাইলটকে প্রশ্ন করেন ভুলবশত তা বন্ধ করেছেন কিনা। তখন অপর পাইলট উত্তরে জানান, তিনি হাতই দেননি। ঠিক পরমুহূর্তে মেঘানিনগর এলাকায় এমবিবিএস হস্টেলের মধ্যে ঢুকে ভেঙে পড়ে লন্ডনগামী AI-171 ড্রিমলাইনার বোয়িং বিমানটি।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, বিকল হয়ে যাওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ হতে শুরু করেছিল। কিন্তু ততক্ষণে বিমান নিচের দিকে নেমে গিয়েছিল। ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরেই তাই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তদন্তকারী ওই সংস্থা আরও জানিয়েছে, ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার সময় বিমানের গতিবেগ ছিল ১৮০ নট অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার। বিমানটি টেক অফের সময় সক্রিয় ছিল বিমানবন্দরের সিসিটিভি। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, বিমানবন্দরের চৌহদ্দি পেরানোর পূর্বেই মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার। তবে তদন্তে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে পাখির ধাক্কা লাগার তথ্য। সেরকম কোনও পরিস্থিতি নজরে আসেনি বলেই দাবি রিপোর্টে। তবে তদন্ত এখনও জারি রয়েছে বলে জানিয়েছে AAIB।
প্রসঙ্গত, ২৪২ জন যাত্রী নিয়ে গত ১২ জুন গুজরাটের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 বিমান। তবে টেক অফের কয়েক সেকেন্ড পরেই নিচের দিকে নেমে বহুতলে ধাক্কা খায় বিমানটি। সঙ্গে সঙ্গে তাতে আগুন ধরে যায়। একজন বাদে মৃত্যু হয়েছে সকল যাত্রীর। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষেরও। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৭০ পেরিয়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপাণীও।