আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে টেক অফের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এমনকি জ্বালানি সুইচও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ হয়ে যায় সুইচ। এরফলে জ্বালানির জোগান বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পাইলটরা তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ধীরে ধীরে মাঝ আকাশ থেকে নীচে নামতে থাকে। একটা অভিশপ্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ভেঙে পড়ে। কিন্তু ঠিক কি ঘটেছিল? কি বলা হচ্ছে রিপোর্টে? একনজরে ঘটনাক্রম-
দুপুর ১:৩৮:৪২- টেক অফ করে বিমান
এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমানটি স্বাভাবিকভাবেই টেক অফ করে। টেকঅফের জন্য প্রয়োজনীয় গতি অর্জন করে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ১৮০ নট (প্রায় ৩৩৩ কিমি/ঘন্টা) গতি নেয়। সেই সময় সবকিছু ঠিকই ছিল। বিমানের ফ্ল্যাপ হ্যান্ডলগুলি ৫ ডিগ্রি অবস্থানে ছিল, যা টেকঅফের জন্য স্বাভাবিক সেটিং। থ্রাস্ট লিভার (যা ইঞ্জিনের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে) টেকঅফ পজিশনে ছিল।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
ইঞ্জিন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় (দুপুর ১:৩৮:৪২ সেকেন্ড)
দুপুর ১:৩৮:৪২, বিমানের দুটি ইঞ্জিন (ইঞ্জিন-১ এবং ইঞ্জিন ২) এর ফুয়েল কাটঅফ সুইচ, রান সুইচ ছিল। হঠাত করে সেটি বন্ধ হয়ে। আর এই পরিস্থিতি এক সেকেন্ডের মধ্যে হয়। কাটঅফ সুইচ বন্ধ থাকায় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে গতি কমতে শুরু করে। সেই সময় ককপিটে ভয়েস রেকর্ডিংয়ে এক পাইলট আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, কেন ফুয়েল কাটঅফ করা হল? দ্বিতীয় পাইলট উত্তর দেয় যে আমি করিনি। এরপর দেখা যায়, সুইচগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ইঞ্জিনের গতি কমতে শুরু করে, RAT সক্রিয় হয়ে যায় (দুপুর- ০১:৩৮:৪৭)
জ্বালানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুটি ইঞ্জিনের গতি কমতে শুরু করে। মাঝ আকাশ থেকে নামতে শুরু করে। র্যাম এয়ার টারবাইন (RAT) হাইড্রোলিক পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমানের হাইড্রোলিক সিস্টেমকে শক্তি দিতে শুরু করে। কিন্তু প্রধান ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ভাবে বসে যায়।
জ্বালানি ইঞ্জিন নতুন করে শুরু করা হয় (দুপুর- ০১:৩৮:৫২)
জ্বালানির ইঞ্জিন নতুন করে চালু করা হয়। দুপুর ০১:৩৮:৫৬ সেকেন্ডে দু’নম্বর ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচও চালু হয় বিমানের ফুল অথরিটি ডিজিটাল ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিনগুলি পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করে। এতে ইঞ্জিন এবং জ্বালানি নতুন করে চালু হয়।
মে ডে কল এবং দুর্ঘটনা (দুপুর – ০১:৩৯:০৫)
প্রায় দুপুর – ০১:৩৯:০৫ সময়ে, বিমানের এক পাইলট মে ডে কল দেন! জরুরি পরিস্থিতিতে এই কল দেওয়া হয়ে থাকে। এটিসির তরফে কল সাইন সম্পর্কে জানতে চাইলেও পাইলটদের কাছ থেকে কোনও উত্তর পাননি। এরমধ্যেই আস্ত বিমানটি ভেঙে পড়ে। EAFR ডেটা রেকর্ডিং ০১:৩৯:১১ সেকেন্ডে থেমে যায়!যা কিনা দুর্ঘটনার সময় হিসাবে দেখা হচ্ছে।
আপাদকালীন পরিস্থিতি (দুপুর – ০১:৪৪:৪৪)
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিমানটি ভেঙে পড়তে দেখেন। অবিলম্বে এই বিষয়ে অ্যালার্ট জারি করে। দুর্ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে যায় একের পর এক দমকলের ইঞ্জিন। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। বলে রাখা প্রয়োজন, আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার একমাসের মাথায় জমা পড়ল প্রাথমিক রিপোর্ট।