ভারত স্বাধীন করতে একমাত্র বাঙালির অবদান বাকিদের চেয়ে বহুগুন বেশি। দেশে হিন্দির পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। জনসংখ্যার হিসাবে ১০ কোটি মতো। অথচ ইদানীং বাংলার বাইরে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যে গিয়ে বাংলায় কথা বললেই দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি বলে। অত্যচার মাত্রা ছাড়িয়েছে অপেক্ষাকৃত অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণীর উপর। এই প্রেক্ষিতেই অসমের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
দিল্লি হোক কিংবা ওড়িশা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলার মানুষকে। শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বললেই জুটছে বাংলাদেশি তকমা। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই ইস্যুতে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা। আর এর মধ্যেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার একটি মন্তব্যকে নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তিনি বলেন, ‘আদমশুমারি নথিতে মাতৃভাষা হিসাবে বাংলা লিখলেই বোঝা যাবে কতজন বিদেশি আছে’। আর এহেন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে শাসকদল তৃণমূলর তরফে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের দাবি, অসমের মুখ্যমন্ত্রী একটি অতি জঘন্য এবং অত্যন্ত নিন্দনীয় দাবি করেছেন। তিনি বলছেন, যারা আদমশুমারি নথিতে নিজেদের মাতৃভাষা বাংলা বলে উল্লেখ করেন, তারা নাকি “বাংলাদেশি”! তাঁকে একটু মনে করিয়ে দিই, আমাদের জাতীয় স্ত্রোত বাংলা – ‘জনগণমন’। আমাদের জাতীয় গানও বাংলা – ‘বন্দেমাতরম্’।, তাহলে যখন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ‘জনগণমন’ কিংবা ‘বন্দেমাতরম্’ গান, তখন কি উনিও তাঁর যুক্তিতে “অবৈধ বাংলাদেশি” হয়ে যান’? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তৃণমূলের।
শুধু তাই নয়, তৃণমূল আর লিখছে, ‘নিজের বিকৃত যুক্তি অনুযায়ী, এবার কি তাঁর নাগরিকত্বই প্রশ্নের মুখে পড়বে’? অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। যেখানে তিনি লিখছেন, ‘এসব কী চলছে? একটা বাঙালীবিরোধী, বাংলাবিরোধী দল বিজেপি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা নয়? পশ্চিমবঙ্গবাসী, ভারতবাসী নই? আর যদি ওরা বাংলাদেশের কথা বলে, তাহলে অমিত শাহর বিএসএফ থাকতে বেআইনি অনুপ্রবেশ হয় কী করে’? সোশ্যাল মিডিয়ায় তোপ কুণালের।
যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত পাল্টা কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কিন্তু কেন এই বিতর্ক? ঠিক কী বলেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী? সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে হিমন্ত জানান, ‘ভাষাকে কখনই ব্ল্যাকমেলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অসমে অসমীয়ারাই স্থায়ী। এটাই সরকারি ভাষা, এটাই রাজ্য ভাষা’। আর তা বলতে গিয়ে বাংলা ভাষা নিয়ে বিতর্কিত একটি মন্তব্য করে বসেন। তিনি বলেন, ‘আদমশুমারি নথিতে মাতৃভাষা হিসাবে বাংলা লিখলেই বোঝা যাবে ঠিক কতজন বিদেশি আছে’।
এখানেই শেষ নয়, সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চর এলাকার মানুষেরা সবসময় তাদের ভাষা হিসেবে বাংলা লিখে আসছে। কিন্তু এই রাজ্যের আদি মুসলিমরা তাদের ভাষা হিসেবে অসমীয়া লেখে। তবে আদমশুমারিতে মাতৃভাষা হিসাবে কে কি লিখছে তাতে কিছু যায় আসে না, অসমে সরকারি ভাষা হিসাভে অসমীয়াই থাকবে বলেও মন্তব্য হিমন্তের। আর এহেন মন্তব্য ঘিরেই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত।
রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের অবশ্য বক্তব্য, উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাই হিমন্তের রাজনীতির ব্র্যান্ড। কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়ে বিজেপির বাকি নেতাদের চেয়েও যে তিনি বেশি হিন্দু, এটা প্রমাণ করার রাজনৈতিক তাগিদও তাঁর আছে। তাই, সে কথা বাস্তবের মাটিতে যতই উত্তেজক লাগুক, আসলে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই