সমাজের অবক্ষয় বলুন বা মানুষের নৈতিক অধঃপতন। মানুষ যেভাবে দেখনদারিতে ডুবছে তাতেই বাড়ছে সর্বনাশ। বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বনাশ বলা হচ্ছে কারণ, এই দেখনদারির জন্য যেভাবে টাকার যোগান হচ্ছে তাতে জীবন উন্নত হওয়ার পরিবর্তে আরও নীচের দিকে নামছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির এই অভ্যেস এখন বড় চিন্তার কারণ। বিশেষ করে ঋণের টাকায় বিলাসিতা করার এই অভ্যেস প্রকট হয়েছে মধ্যবিত্তদের মধ্যে। আইফোন, দামি বাইক, দামি পোশাক কেনার জন্যেও এখন দেদার লোন নিচ্ছে আমআদমি। এই সমস্ত সামগ্রী কেনার জন্য এমনিতেই নানান ব্যাঙ্ক থেকে সহজ কিস্তিতে চটজলদি লোন পেয়ে যাচ্ছে তাঁরা।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
মনের মত জিনিস কিনতে পকেটে টাকা নেই? তাতে নো পরোয়া। জিরো ডাউন পেমেন্ট ইএমআই আছে তো। এতে ক্রেডিট কার্ডের ভূমিকাও কম নয়। কিন্তু এই সব জিনিস কেনার পর মাথায় চাপছে প্রত্যেক মাসে ইএমআই মেটানোর দায় এবং চিন্তা। পার্সোনাল ফাইনান্স এক্সপার্টরা বলছেন, ভারতে ঋণ নিয়ে বিলাসবহুল জিনিস কেনার প্রবণতা মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ মানুষের মাথার ছাদ ঘর-বাড়ি নিয়ে চিন্তা নেই। আর্থিক খরচের ওপর করা এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে গত দুই বছরে পার্সোনাল লোন নেওয়ার প্রবণতা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সমীক্ষা আরও জানাচ্ছে, ২০২৩ এ মানুষের ওপর ঋণের বোঝা ৩.৯ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫এ ৪.৮ লক্ষ টাকা হয়েছে।
মধ্যবিত্তরা কীভাবে ঋণের জালে ফাঁসছে তা বোঝাচ্ছে বাজারে বিলাসবহুল সামগ্রীর ক্রমবর্ধমান বিক্রি। এখন বলতেই পারেন, এই সব জিনিস তো উচ্চবিত্ত শ্রেণীও কেনে? হ্যাঁ কেনে, তবে তা অবশ্যই ঋণ নিয়ে নয়, তাঁদের সাধ্যের মধ্যেই। একমাত্র মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিলাসবহুল সামগ্রী কেনার জন্য সাধ্যের বাইরে গিয়ে যেকোন শর্তে ঋণ নিতে প্রস্তুত, ইএমআইয়ের টাকা দেওয়া তার ক্ষমতার মধ্যে হোক বা না হোক।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
বলা হচ্ছে, একসময় মানুষ বাড়ি-ভবিষ্যতের কথা ভেবে সম্পত্তি তৈরির জন্য ঋণ নেওয়ার কথা ভাবত। কিন্তু এখন শুধুমাত্র মোবাইল, বাইক বা বিলাসবহুল সামগ্রী কেনার জন্য ঋণ নিচ্ছে। রিটেল লোন আরবিআইএর কাছেও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সাধারণ মানুষের উপর বৃদ্ধি পাওয়া পার্সোনাল ঋণের বোঝা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। এবং একে মধ্যবিত্ত সমাজের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করছে কেন্দ্রীয় এই ব্যাঙ্ক।
অসুরক্ষিত লোনের বোঝা বৃদ্ধি পাওয়া পরিসংখ্যান নিয়েও অর্থনীতিবিদরা শুধু সতর্কই করছেন না, তাঁরা বলছেন, এই অভ্যেস ভবিষ্যতে যুব সমাজের কাছে এমন এক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ঋণ মেটাতে গিয়েই তাদের সমস্ত উপার্জন চলে যাবে বলেও ইঙ্গিত অর্থনীতিবিদদের। এমনকী ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের কথা তাঁরা ভাবতেই পারবেন না বলেও দাবি। ফলে আগামিদিনে যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়াবে বলেও আশঙ্কা।