গত ২১ মাস ধরে ফ্রেঞ্চ টেলিভিশনে ইমিলিয়াঁর একচ্ছত্র আধিপত্য। যে কোনও দিন, দুপুরবেলা, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট এক গেম শো খুললেই তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত। কারণ গত ২১ মাস ধরে, এই মিতভাষী, গোল চশমা আঁটা ভদ্রলোক একের পর এক প্রতিপক্ষকে হারিয়ে চলেছেন তাঁর দুর্ধর্ষ জ্ঞানের সাহায্যে।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তার খাতিরে নিজের পদবী প্রকাশ্যে আনেন না ইমিলিয়াঁ। তবে এখন ফ্রান্সে তিনি সেলিব্রিটি। জনপ্রিয় গেম শো ‘লে দুজ় কু দু মিদি’ বা ‘দ্য টুয়েলভ স্ট্রোকস অফ নুন’-এ তাঁর জেতার রেকর্ড বাকি সমস্ত রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে তাঁর এই গেম শোয়ে পথচলা। ইতিমধ্যেই তিনি ৬৪৭ বার জিতেছেন এবং ২.৫৬ মিলিয়ন ইউরো ঝুলিতে ভরেছেন।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
নগদ ও উপহার মিলিয়ে প্রায় ৩ মিলিয়ন। কিন্তু কোনও সাম্রাজ্যই যেন চিরস্থায়ী হয় না। গত রবিবার সেই ধারাবাহিক জয়ের সফর থামল। বছর ২২-এর যুবক হারলেন গেম শোয়ে। তবে এই রেকর্ড ভাঙা সাফল্যও তো আর মুখের কথা নয়। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইট ইজ় এ ক্রেজ়ি স্টোরি। আমি নিজেই আশা করিনি যে এতদিন টিকে যাব।’
জনপ্রিয় এই গেম শোয়ে ৪জন প্রতিযোগী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে যিনি জয়ী হন, ‘মাস্টার অফ নুন’ তিনি সেই খেতাব রক্ষার চেষ্টা করেন পরেরদিনও। ইমিলিয়াঁ বলছেন, ‘আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল। প্রথম দিন থেকে ৬৪৭তম দিন পর্যন্ত, শোয়ের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা, নিজের সেরাটা দেওয়া এবং পরের দিন আবার ফেরত যেতে পারা। কোনও রেকর্ড গড়ার কথা ভাবিনি কখনও।’ কিন্তু রেকর্ড তিনি গড়েছেন। ইমিলিয়াঁর মাথায় উঠেছে ‘দ্য় গ্রেটেস্ট চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়নস’ শিরোপা।
চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে ‘লেজেন্ডারি সফর’ তকমা দেওযা হয়েছে। সোলো গেম শোয়ে অংশ নেওয়ার বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। একইসঙ্গে গেম শো জেতার ইউরোপীয় রেকর্ডও ভেঙেছেন। গেম শোয়ে অবশ্যই নগদ জিতেছেন তিনি। সেই সঙ্গে উপহার জিতেছেন প্রায় ৮ লক্ষ ইউরোর। যার মধ্যে ২৩টি গাড়ি, ভেনিস বা ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের মতো স্থানে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ, প্যারাশুটিং সেশন, টেলিভিশন, স্মার্টফোন, গেম কন্সোল, স্কুটার, বাদ্যযন্ত্র, গয়না, মেকআপ, বাইসাইকেল, ঘরের জিনিসপত্র ও আরও অনেক কিছু আছে। ইমিলিয়াঁ তাঁর এই বিপুল উপহার সামগ্রীর মধ্যে কিছু রেখেছেন, তবে অনেক কিছুই দিয়ে দিয়েছেন অন্যদের বা বিক্রি করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
যেমন ৭৭ পাউন্ড ক্যান্ডি নিয়ে তাঁর বিশেষ কিছু করার ছিল না, সেগুলি স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। যে অনুষ্ঠান দেখে তিনি বড় হয়েছেন, সেখানেই রেকর্ড ভাঙা পারফর্ম করে ইমিলিয়াঁ জানান ১৮ বছর বয়স হতেই এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য অ্যাপ্লিকেশন দেন। কিন্তু বাতিল হয়ে যান। ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু ঠাকুমার উৎসাহে ২ বছর পর ফের চেষ্টা করেন, সফল হন, দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেন। অল্পবয়সীদের জন্য তিনি এখন ‘রোল মডেল’। ইমিলিয়াঁ বলছেন, ‘আমি এমন একজন যে প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালোবাসি। যদি তাতে কিছু মানুষ উপকৃত হন, সেটাই চাইব।’