বার পূজোর সঙ্গে বাঙালির আত্মার সম্পর্ক। পুরনো পাড়াগুলোতে দুর্গোৎসব শুরু হতো ‘বার’ পুঁতে। বাঁশ-কাঠ-মাটি মিলিয়ে তৈরি সেই খুঁটি ছিল প্যান্ডেলের প্রথম স্তম্ভ, যার গায়ে মাটির দাগ, ধূপধুনো আর শঙ্খধ্বনিতে মুখর হতো সকাল। কিন্তু এখন? সেই বার পুজোর দিন অনেকটাই অতীত!
এখন বাংলা দেখছে এক নতুন আচার খুঁটি পুজো। তবে এ পুজো আর শুধুই দুর্গা ঠাকুরের আগমনের বার্তা নয়। এ পুজো এখন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের ‘আধ্যাত্মিক সূচনা’।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবস সভার আগে তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চ তৈরি হয় খুঁটি পুজো দিয়ে। এমনকি ধর্মীয় আচার অনুযায়ী পুজো হয়, ফুল, ধূপ, নারকেল ফাটানো হয়, সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারিত হয়। কোথাও যেন দুর্গা ঠাকুরের আবাহনের মতোই, কিন্তু এখানে দুর্গা নয়, প্রধান অতিথি হচ্ছেন নেতা বা নেত্রী।
এই খুঁটি পূজোর রীতি যদিও নবীন, তবে তা রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে প্রবল। বলা বাহুল্য, এই খুঁটি এখন শুধু মঞ্চের কাঠামো নয়, এটা দলের ভিত্তি, কর্মীদের মনোবল, সভার ‘ধর্মীয় সম্মতি’।
বাঙালি সবকিছুকে উৎসবে পরিণত করতে জানে। সেই সূত্রেই হয়তো খুঁটি পুজোও উৎসবের ছোঁয়া পেয়েছে। এটিকে একমাত্র নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে ভুল হবে। একভাবে দেখলে, এতে দলের কর্মীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার সাংগঠনিক কৌশল রয়েছে। পুজোর আবহে দলকে আরও কাছের করে তোলা হচ্ছে জনগণের কাছে।
আরও পড়ুন
তবে প্রশ্ন এখানেই, রাজনীতির উৎসব কি ধর্মীয় অনুষঙ্গ দিয়ে legitimise করা উচিত? রাজপথের সভা, আন্দোলনের প্রস্তুতি কি এতটাই পবিত্র হয়ে উঠেছে যে তারও পূজা দরকার? নাকি এটি শুধুই এক সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা, যার মাধ্যমে জনসংযোগের ভাষাকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে?
এই রীতি ঠিক, না ভুল, তা সময় বলবে। কিন্তু এটুকু পরিষ্কার, এই বাংলায় এখন রাজনীতির খুঁটিও পুজো পায়, আর প্যান্ডেলের খুঁটি অপেক্ষায় থাকে মা দুর্গার! যেখানে একসময় বার পুজো মানেই ছিল ঠাকুরের আগমনের প্রথম ধ্বনি, এখন সেখানে খুঁটি পুজো মানে রাজনৈতিক আবাহন। খুঁটি আর মঞ্চ, এখন শুধু কাঠামো নয়, নির্বাচনের রণমঞ্চের সূচনা।
বাঙালি এখন শুধু দুর্গা নয়, নেতার আগমনেরও মাটি পুঁতে রাখছে।
শ্রাবণ-ভাদ্র এখন শুধু রথ, রাখি নয়, এখন ‘খুঁটি’রও মাস!
