ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি বাজার। এই বাজারে বর্তমানে ইলেকট্রিক গাড়ির বিক্রির গতি ঊর্ধ্বমুখী। এই ঊর্ধ্বমুখী বাজারের রাস্তায় চলতে হাজির মাস্কের টেসলা সহ আরো এক বিদেশি কোম্পানির গাড়ি। এবার বিদেশের দুই বৃহত্তম কোম্পানি তার ভাগ্য পরীক্ষা করতে নামছে ভারতে। আজ অর্থাৎ ১৫ জুলাই ভারতীয় বাজারে বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তি এলন মাস্কের মার্কিন ইলেকট্রিক কার কোম্পানি টেসলা পদার্পণ ঘটছে। শুধু টেসলা নয় সঙ্গে ভিয়েতনামের উইনফাস্টও নিজের এসইউভি মডেলের গাড়ির বুকিং শুরু করতে চলেছে আজই।
ভারতে টেসলার ওয়াই মডেলের গাড়ি বিক্রির জন্য হাজির হলেও গ্রাহকদের কতটা পছন্দের হবে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গাড়ি বিশেষজ্ঞরা।কারণ অধিক আমদানি শুল্কের কারণে চিনের গাড়ির তুলনায় এই গাড়ির দাম ভারতে অনেকটাই বেশি পড়ছে। এই গাড়ির বেসিক মডেলের দাম ২৭ লক্ষের কিছুটা বেশি। কিন্তু ইম্পোর্ট ডিউটি এবং ট্যাক্স মিলিয়ে টেসলাকে এই গাড়ির জন্য ভারত সরকারকে ২১ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ একডজন গ্রাহককে মডেল y কার কিনতে হলে দাম হিসেবে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা দিতে হবে। যদিও টেসলার ওয়েবসাইট বলছে ভারতে এই গাড়ির দর প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।
ভারতের বাজারে একসঙ্গে মার্কিন এবং ভিয়েতনামি কোম্পানির আগমন ভারতীয় বাজারকে আরও চাঙ্গা করবে বলেই মত বাজার বিশেষজ্ঞদের। জানা গেছে, ভারতের টেসলা তার প্রথম শোরুম মুম্বইয়ের এক্সপিরিয়েন্স সেন্টার এবং তারপর বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে শুরু করতে চলেছে। তবে উইনফাস্ট কিন্তু ভারতের বাজারে টেসলা থেকে দু’কদম এগিয়েই রয়েছে বলা যায়। কারণ এই কোম্পানি টেসলার আগেই ভারতের ২৭টি শহরে ডিলারশিপের জন্য ৩২ জন পার্টনার খুঁজে ফেলেছে। ভারতে আজ থেকেই উইনফাস্টের গাড়ির বিক্রির বুকিং শুরু।
এলন মাস্কের জন্য ভারতের বাজারে পদার্পণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফাকচার্স এসোসিয়েশন (ACEA)-এর সমীক্ষা বলছে, মে মাসে ইউরোপ জুড়ে টেসলার গাড়ির বিক্রি লাগাতার কমেছে। গত বছরের তুলনায় ২৭.৯% কমে ১৩,৮৬৩ তে দাঁড়িয়েছে। এই হ্রাসের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দাম কম হওয়ায় বেশিরভাগ ক্রেতা চিনের কোম্পানির তৈরি গাড়ি কিনতে আগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বাজার টেসলার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা।
ভারতের বাজারে টেসলার প্রবেশ বহু বছরের চেষ্টার ফল বলাই যায়। কারণ নিজের এসেম্বল করা গাড়িগুলির ক্ষেত্রে, কমপ্লিটলি বিল্ট ইউনিটস (UBU)- এর হাই ইম্পোর্ট ডিউটি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এই কারণে ভারতে আসার আগে এলেন মাস্ক ভারত সরকারের ওপর লাগাতার বিদেশ থেকে আসা ইলেকট্রিক কারের ওপর ট্যাক্স কম করার জন্য লাগাতার চাপ দিতে থাকে। প্রথম দিকে ভারত সিবিইউ রুট দিয়ে প্রবেশ করা গাড়ির ওপর ১১০% কর চাপাত। কিন্তু ২০২৫-২৬ বাজেটে কেন্দ্র এই কর কমিয়ে ৭০% করে। যদিও এই কর ঘাটতির সঙ্গে কিছু শর্তও আরোপ করা হয় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য। বলা হয়েছে, কার প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে ৩ বছরের ভেতর কম করে ৪,১৫০ কোটি(প্রায় ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার)-এর বিনিয়োগ করতে হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতে উৎপাদনও শুরু করতে হবে। এরপরই টেসলার এই সিদ্ধান্ত। যদিও প্রথম দিকে টেসলা ভারতে ইলেকট্রিক গাড়ির প্লান্ট শুরু করার চেষ্টা করেছিল।