সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
ক্রিকেট কি সত্যিই রাজার খেলা? সদ্য সমাপ্ত ভারত ইংল্যান্ড তৃতীয় টেস্টের শেষ দিনে এই প্রশ্ন তুলে দিল ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডস-এর একটি ছবি।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের রাজা-উজিররা যখন ভুপতিত, তখন নিঃসঙ্গ সৈনিকের মত বাইশ গজের যুদ্ধভূমিতে লড়াই চালাচ্ছেন রবীন্দ্র জাডেজা। সঙ্গে অবশ্য যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছিলেন শেষ প্রহরী মহম্মদ সিরাজ। আচমকা ছন্দপতন, কিছুটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ হলো সিরাজের লড়াই। ঠিক যেন পলাশীর যুদ্ধের ছায়া। অপর প্রান্তে তখনো ‘একা কুম্ভ’ কিংকর্তব্যবিমূঢ় একক সেনাপতি জাডেজা। ততক্ষণে মাটিতে উবু হয়ে বসে পড়েছেন সিরাজ। একে একে সিরাজকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন বিজয়ী ইংরেজ বেন স্টোকস, পোপ, জো রুট-রা।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
অপর প্রান্তে তখনো হতাশ-বিহ্বল একাকী সেনাপতি জাডেজা। যিনি প্রতি মুহূর্তে জোফ্রা আর্চার, ওকস, বশির, স্টোকসের মতো ক্ষুধার্ত ইংরেজদের সামনে নিজের অসীম ধৈর্য, টেকনিক আর মনের জোরে লড়াই চালিয়ে নিঃশব্দে যেন জবাব দিচ্ছিলেন— “যতক্ষণ শ্বাস আছে, আমি আছি।” যেন দেশ রক্ষার লড়াইতে ‘চিতোর রাণার পণ’। সিরাজের দুর্ভাগ্য যখন তাঁকে ভূপতিত করল তখন অপর প্রান্তে জাডেজার চোখে শুধুই স্বপ্নভঙ্গ। আর সেই মুহূর্তেই ধরা পড়লো এক বিরল ছবি। বিজয়ী ইংরেজ সেনাপতি বেন স্টোকস আলিঙ্গনবদ্ধ করলেন জাডেজাকে।
যে দৃশ্যকে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দিত করল ক্রিকেটের তীর্থভূমি। ক্রিকেটের মহাকাব্যে এই ছবিটা শুধু একটি সৌজন্যতাবোধের প্রতিফলন নয় বরং একজন প্রকৃত যোদ্ধার প্রতি বিজয়ীর সম্মান। এ দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় আলেকজান্ডার-পুরু’র ইতিহাস— যেখানে বিজয়ী বীর আলেকজান্ডার পরাজিত ভারতীয় রাজা পুরুকে দিয়েছিলেন রাজসম্মান– “তুমি রাজাদের মতো লড়েছো, রাজাদের মতোই তোমায় আমি সম্মান দেবো।”
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
পুরু যেমন জিতেছিলেন প্রতিপক্ষের মন তেমনি ট্র্যাজিক হিরো হয়েও ১৪০ কোটির ভারতবর্ষের মন জিতেছেন জাডেজা-সিরাজ। জয়-পরাজযয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁরা অমর হয়ে থাকবেন তাদের হার না মানা লড়াইয়ের জন্য। অমর হয়ে থাকবে এই লড়াই,এই ক্রিকেটীয় শিক্ষা।
আর হ্যাঁ, বিজিত হয়েও প্রকৃত যোদ্ধাকে বিজয়ীর সম্মান দেওয়ার সেই ছবিটা? সত্যি ক্রিকেট যেন “রাজার খেলা”।