সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
“বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী”। মহাভারতের এই অমোঘ বাণী শুনিয়ে বাংলা ও বাংলা ভাষাকে রক্ষার ব্রত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “বাংলাকে বাংলাদেশ করতে দেওয়া হবে না” এ কথা জানিয়ে ২৬-এর নির্বাচনে বাংলা যে তাঁদের হাতেই থাকবে সে কথাও জানিয়ে দিলেন মমতা। শুধু বিধানসভা নয় আগামীর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি হটাতে জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ সংঘবদ্ধভাবে লড়াই করবে বলেও কলকাতা থেকে ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী। “বাংলা ও বাঙ্গালীদের উপর অত্যাচার করলে আমরা সহ্য করব না। যে বাংলা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে সেই বাংলা বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ লড়াই করবে” বলেন মমতা।
মমতার কথায় ” ইন্দিরা গান্ধির ইমার্জেন্সির থেকেও ভয়ংকর এই বিজেপির সরকার। এখনও পর্যন্ত এক হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলে আটকে রেখে দিয়েছে। কিন্তু আমি ছাড়বো না।” মমতার প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ” আমাকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতেই হবে। জেনে রাখুন বিজেপি, খেলা হবেই।”
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
বাংলাভাষী মানুষজনের ওপর অত্যাচার এবং বাংলার প্রতি রাজনৈতিক চক্রান্তকে “দেশের লজ্জা” বলে উল্লেখ করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন “ভারত সরকার লুকিয়ে লুকিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি করেছে যে যাকেই বাংলাভাষী বলে সন্দেহ হবে তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যেতে হবে।” এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে আইনগতভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী।
তাঁর বক্তব্য, “আমরা সব ভাষাভাষীর মানুষকে সম্মান করি। সে যে রাজ্যের মানুষই হোক না কেন। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে বাঙালিদের উপর আপনার অত্যাচার করবেন। আমরা এটা ছাড়বো না, আমরা সহ্য করব না। দিল্লির লোকেরা আপনারা কি মনে করেছেন ? যা ইচ্ছা তাই করবেন ? বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাদের রোহিঙ্গা বলে দেবেন?”
মমতা এদিন দাবি করেন, যারা পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক যাদের কাছে সমস্ত রকম আইকার্ড রয়েছে সে যদি বাইরের রাজ্যে কাজ করতে যায়, তারা এমনি এমনি যায় না, তাদের স্কিল আছে তাই তারা কাজ করতে যায়। মমতার মন্তব্য, “বিজেপি গরিব বিরোধী সাম্প্রদায়িক দল। বিজেপি এইসব লোকগুলোকে দিয়ে কাজ করাবে আর বাংলায় কথা বললেই হোল্ডিং এরিয়ায় নিয়ে যাবে ? কেন বাংলা কি ভারতের অংশ নয় ? বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাকে ধরে জেলে ভরে দিতে হবে ?”
আরও পড়ুন
মূলত, একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষজনের উপর আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে। মহারাষ্ট্র গুজরাট রাজস্থান বিহার ওড়িশা এমনকি রাজধানী দিল্লিতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে একাধিকবার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিকবার আবেদন জানিও কোন সুফল মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার পাল্টা খোঁচা “মহারাষ্ট্রে যখন হিন্দিভাষীদের উপর আক্রমণ হয়েছে তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা সবাইকে সম্মান করি। আমরা অন্য কোন ভাষার কারণে কারও গায়ে হাত তুলি না। কারন আমরা মনে করি তাঁরাও এই দেশের মানুষ।” বিজেপির উদ্দেশ্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, বাঙালীদের উপর এত রাগ কেন? কি করেছে বাঙালি আপনাদের?
বিশেষ করে প্রতিবেশী ওড়িশার উদ্দেশ্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা “যদি না থামেন তাহলে আগামী দিনে আপনাকে থামাতে কি করা দরকার সেটাও বুঝে নেবেন। ওখানে অত্যাচার হলে এখানেও প্রতিবাদ হবে। সতর্ক করে বলে যাচ্ছি এত করে ছোট করে দেখবেন না।”
রাজ্যে রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষজনকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে পুশব্যাক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অভিযোগ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই। বাংলাভাষী মানুষজনকে রোহিঙ্গা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। যারা বাংলায় থাকে তাদেরকে এনআরসি নোটিশ পাঠাচ্ছে অসম সরকার! বাঙালিদের উপর এত অত্যাচার কেন? সমস্ত ডকুমেন্ট দেখালেও জেলে নিয়ে যাচ্ছেন কেন ? এই প্রশ্নের উত্তর চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন “কেন্দ্রীয় সরকারের জানা উচিত আমাদের রাজ্যেও পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, বাইরের মানুষ রয়েছেন, কই তাদের উপর তো আমরা কিছু করি না।” দিল্লিতে যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন তাঁদের ইলেকট্রিসিটি ও জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।
ইউটিউবেও জাজবাত, আপডেট থাকুন আমাদের সঙ্গে
এমনকি গতকাল রাতেও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর অত্যাচার হয়েছে বলেও অভিযোগ জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার অভিযোগ, সীমান্ত সুরক্ষা যাদের হাতে রয়েছে তারাই বলছে বাংলাদেশি এরাজ্যে ঢুকেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, “সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশিরা দেশে ঢুকলো কিভাবে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে রয়েছে বিএসএফ সিআইএসএফ। তাহলে কি করে বাংলাদেশি রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকলো? “
মমতার চ্যালেঞ্জ “বাংলার মানুষ আমাকে জিতিয়েছে। বাংলার জন্য আমাকে কাজ করতে দিন। যদি আমাকে এখানে কাজ করতে ডিস্টার্ব করেন তাহলে কিন্তু আমি সারা দেশ জুড়ে ঘুরবো। দেখবো কটা ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যেতে পারেন।”
তিনি জানান, বাইরে কাজ করেন আমি তো তাদেরকে অনেকবার বলেছি চলে আসুন, আমি যদি দুটো রুটি খাই তাহলে একটা রুটি আপনার সঙ্গেও ভাগ করে খাব। এখানে সব কিছু পাবেন। তাহলে বাইরে কেন ?
বাংলাভাষী মানুষজনকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে যে বিষয়টি রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি চর্চায় তা হল এসআইআর বা ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন। বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে যে প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বুধবারের কেন্দ্র বিরোধী প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে নির্বাচন কমিশন কেও এক হাত নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
শুনুন Jazzbaat24Bangla ‘রেডিও সমাচার’
কমিশনকে পরোক্ষে ‘বিজেপির দালাল’ বলে এবং দেশের নির্বাচন কমিশনার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাক্তন কর্তা এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বক্তব্য, ” ভোট আসলেই ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। মহারাষ্ট্র এ কাজ হয়েছে বিহারেও এই পরিকল্পনা চলছে। নির্বাচন কমিশনকে বলবো বিজেপির দালালি করবেন না, মানুষের জন্য কাজ করুন।” রাজ্যবাসী প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা “ভোটার লিস্টের কাজ যখন শুরু হবে তখন প্রয়োজনে একদিন কামাই করবেন। কিন্তু লিস্টে নাম তুলে আসবেন।” তাঁর কটাক্ষ, “বন্যা ত্রাণে একটা টাকা দেন না, আবার ভোট চাইতে আসেন, লজ্জা করে না?”