বলিউডে কেরিয়ারের শুরুতে ক্যাটরিনা কাইফকে অনেকেই কেবল ‘প্রিটি গার্ল’ বলে অবহেলা করেছিলেন। অভিনয় নিয়ে তখনকার সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে বিশেষ আশা জাগাতে পারেননি তিনি। এমনকি একসময় তিনি ঠিক করে ফেলেছিলেন বলিউড ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু সেই সময়েই মুক্তি পায় তার সিনেমা ‘নমস্তে লন্ডন’ (২০০৭)। সিনেমাটি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। সেই সঙ্গে দর্শকরা তাঁর অভিনয় প্রতিভাকেও স্বীকৃতি দিতে শুরু করেন। এই ছবিটি তাঁর কেরিয়ারে নতুন মোড় নিয়ে আসে।
পরবর্তীকালে ক্যাটরিনা বলিউডে একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দেন, যেমন, ‘ভারত’, ‘এক থা টাইগার’। ঠিক এই সময়, যখন তিনি ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন, তখন তিনি তাঁর ‘প্রিটি গার্ল’ ইমেজকে কাজে লাগিয়ে এক সাহসী ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৯ সালে শুরু করেন নিজের বিউটি ব্র্যান্ড “Kay Beauty”।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
ক্যাটরিনা ব্যবসা শুরু করার আগে ২০১৮ সালে Nykaa-র সঙ্গে যৌথভাবে এক উদ্যোগে ২.০৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তাঁর এই বিনিয়োগের মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২২ কোটিতে। এই বিনিয়োগ প্রমাণ করে দেয়, ক্যাটরিনার শুধু অভিনয় নয়, ব্যবসার ক্ষেত্রেও রয়েছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং দূরদর্শিতা। এই শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই ২০১৯ সালে তিনি Nykaa-র সঙ্গে যৌথভাবে চালু করেন Kay Beauty।
যেখানে মেকআপ বাজারে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে, সেখানে ক্যাটরিনা একেবারে নতুন কৌশলে নিজের ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করে তোলেন। Kay Beauty ছিল ক্যাটরিনার নিজস্ব ভাবনা এবং শুরু থেকেই এই ব্র্যান্ড দ্রুত সাড়া ফেলতে শুরু করে। এক সাক্ষাৎকারে ক্যাটরিনা বলেন, ছোটবেলা থেকেই মেকআপের প্রতি তার বিশেষ ভালোবাসা ছিল। তিনি বলেছিলেন, “আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন শপিং মলে গিয়ে মেকআপ কাউন্টারে সব লিপস্টিক আর ফেস প্রোডাক্ট ট্রাই করতাম। রং, টেক্সচার, সবই আমাকে মোহিত করত। আপনি নিজের মুখের কিছু ফিচার হাইলাইট করে যেভাবে নিজেকে রূপান্তর করতে পারেন, সেটা সত্যিই অবাক করার মতো।” পরে মডেলিং ও অভিনয়ের সময় দেশের সেরা মেকআপ আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করে তিনি আরও পেশাদার কৌশল শিখেছিলেন, এবং সেগুলোকেই নিজের কাজের সঙ্গে মেলান।
বর্তমানে বলিউডের অনেক সেলেব যেমন কৃতি শ্যানন, মাসাবা গুপ্তা, দীপিকা পাড়ুকোন, মীরা রাজপুত নিজেদের বিউটি বা স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড চালু করেছেন। তবে কেউই ক্যাটরিনার সাফল্যের ধারে কাছেও আসতে পারেননি। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, দীপিকা পাড়ুকোনের স্কিনকেয়ার ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই ক্ষতির পেছনে দীপিকার ব্র্যান্ডের অতিরিক্ত দামের নীতিকেই দায়ী করেছে রিপোর্টটি।অন্যদিকে, ২০২৫ সালের সেই একই রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৬ বছরের মধ্যে ক্যাটরিনার Kay Beauty ব্র্যান্ড ২৪০ কোটি টাকা অর্জন করেছে। এটি ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কসমেটিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন
ব্যবসায়িক সাফল্যের বাইরেও ক্যাটরিনা কাইফের রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল সম্পত্তি। তথ্যানুসারে, মুম্বাইয়ের অন্ধেরি ওয়েস্টে মৌর্য হাউসে রয়েছে তাঁর একটি দুই তলা অ্যাপার্টমেন্ট, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এছাড়াও, লন্ডনে তাঁর একটি বাড়ি রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ৭.২ কোটি টাকা, যা তিনি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় বেস হিসেবে ব্যবহার করেন। বর্তমানে স্বামী অভিনেতা ভিকি কৌশলের সঙ্গে মুম্বাইয়ের জুহু অঞ্চলের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন ক্যাট।
শুধু সম্পত্তি নয়, ক্যাটরিনার গাড়ির সংগ্রহও চোখে পড়ার মতো। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, তার সবচেয়ে দামি গাড়ি হলো ‘রেঞ্জ রোভার ভোগ এলডাব্লিউবি’, যার মূল্য প্রায় ২.৩৭ কোটি টাকা। এছাড়াও তার সংগ্রহে রয়েছে মার্সিডিজ এম এল থ্রি ফিফটি, যার দাম প্রায় ৬৬ লাখ টাকা এবং অডি কিউ সেভেন যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে, ক্যাটরিনা কাইফের বর্তমান মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬৩ কোটি টাকা। এই অর্থের উৎস হলো তার সিনেমা থেকে আয়, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট, ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং তার জনপ্রিয় মেকআপ ব্র্যান্ড Kay Beauty থেকে। নিজের সৌন্দর্য ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ক্যাটরিনা গড়ে তুলেছেন এক বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য।