যিনি জামাইয়ের বাবা, তিনি আবার জামাইয়ের ছেলেরও বাবা! না, এটা আজগুবি কোনও গল্পকথা নয়। বাস্তবে এমনই এক বাবার হদিশ মিলেছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের ২৪৩ নম্বর পার্টের ভোটার তালিকায়। তাতে দেখা গিয়েছে, ৬২ বছর বয়সী কালাচাঁদ মণ্ডল তাঁর ৫২ বছর বয়সী জামাই দুলাল মণ্ডলের বাবা। একইসঙ্গে তিনি জামাইয়ের ছেলে দুর্জয় মণ্ডলেরও বাবা। সন্ধান মিলতেই কেতুগ্রামে তুমুল হইচই পড়ে গিয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত।
ভোটার তালিকা থেকে ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের খুঁজে বের করার জন্য দলীয় স্তরে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো ভোটার তালিকা ধরে স্ক্রুটিনির কাজ শুরু করে কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব। তখনই ২৪৩ নম্বর পার্টের ভোটার তালিকায় দেখা যায় ওই গরমিল। এ নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ, “বিজেপির মদতে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা নাতি ও জামাইয়ের বাবা একই ব্যক্তি সেজে ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়েছে।”
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি। তাদের দাবি, “বাংলার সরকার-প্রশাসন সবেতেই তৃণমূল। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলই অবৈধদের নাম এভাবে ভোটার তালিকায় তুলিয়েছে।” তবে কাটোয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তথা কেতুগ্রাম বিধানসভার রিটার্নিং অফিসার অনুপম চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “ওই ভোটারদের নিয়ে অভিযোগ আসায় শুক্রবার তাদের শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। শুনানির পর কী হয়েছে তা বলা যাবে।”
এলাকার বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে, বৃদ্ধ কালাচাঁদ মণ্ডল ভোটার তালিকায় দুলাল মণ্ডলকে তাঁর ছেলে হিসেবে দেখিয়েছেন। যদিও দুলাল আসলে হলেন কালাচাঁদের জামাই। আবার দুলালের ছেলে দুর্জয় আদতে কালাচাঁদের নাতি হলেও ভোটার তালিকায় তাকেও কালাচাঁদের ছেলে হিসাবে দেখানো হয়েছে। স্থানীয়রা আরও জানান, দুলাল ও দুর্জয় তিন বছর কেতুগ্রামে কালাচাঁদ মণ্ডলের বাড়িতে এসেছে। ভুয়ো নথি দেখিয়ে তাদের নাম ভোটার তালিকায় তোলা হয়েছে। কালাচাঁদ মণ্ডল নিজে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। দুলাল ও দুর্জয়কে ছেলে সাজিয়ে তাদের নাম ভোটার তালিকায় তুলতে গিয়ে কালাচাঁদ এখন তিন পুত্রের ও এক মেয়ের বাবা।
কালাচাঁদ মণ্ডল জানান, তিনি ২৪ বছর আগে কেতুগ্রামে এসেছেন। দুলাল আসলে যে তাঁর জামাই তা স্বীকার করে নিয়ে কালাচাঁদ বলেন, “কাজটা ভুল হয়েছে তা আমি জানি। আমার মেয়েকে কাছে রাখার জন্য আমি এসব করেছি।” কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ অভিযোগ করেন, “কালাচাঁদ বিজেপির সমর্থক। বিজেপির মদতেই বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে অবৈধ উপায়ে তাদের নাম ভোটার তালিকায় নাম তোলা হচ্ছে। এইসব ভুয়ো ভোটারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে বলব।”