সম্প্রতি কেরলে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বসার বিষয়ে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য ক্লাসরুমে পিছনের সারিতে কেউ থাকবে না। বরং সবাই সমান গুরুত্বে থাকবে। এই নতুন শিক্ষানীতির নাম ‘নো ব্যাকবেঞ্চার্স’। কেরলের দেখানো পথে তামিলনাড়ু রাজ্যেও বহু স্কুল এই ব্যবস্থা নিয়েছে। আবার পশ্চিমবঙ্গেও অনেক স্কুল এভাবে বসানোর ব্যবস্থা করছে। একদিকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে কেরলে ক্লাসরুমে গোল হয়ে বসার ছবি যেমন দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বভারতীর বর্তমান-প্রাক্তন পড়ুয়ারাও প্রকৃতির কোলে পাঠভবনের বেদির তলে ক্লাসের ছবি পোস্ট করছে।
উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা শতাব্দী প্রাচীন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন ভারতীয় তপোবনের আদর্শে আশ্রমের শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু করেছিলেন। চার দেওয়ালের বাইরে যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সংযোগে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর ব্রহ্মচর্যাশ্রম বা পাঠভবন স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, শিক্ষা হবে শিশুর কাছে আনন্দদায়ক। শিশুরা উন্মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। তাই খাঁচায় বন্দি স্কুল বাদ দিয়ে প্রকৃতির উন্মুক্ত পরিবেশে শিশুদের শিক্ষার কথা ভেবেছিলেন। শিশুরা যাতে খেলতে খেলতে শিখতে পারে। প্রকৃতির অপরূপ ঋতু বৈচিত্র্যকে উপলব্ধি করে। এমনকি নিজেদের হৃদয়ে মনের বিকাশ ঘটাতে পারে। শতবর্ষ অতিক্রান্ত হয়েও এখনও একইভাবে সেই গাছের তলায় বেদিতে গোল হয়ে বসে ক্লাস চলে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে জমে ওঠে আনন্দদায়ক পাঠশালা।
অনেকেই মনে করছেন রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা এখানেই স্বতন্ত্র। শান্তিনিকেতনের ওপেন এয়ার ক্লাসরুমের নেই কোনো বিভাজন। এমন একটি ক্লাস যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকে না। বরং সবাইকে সমান গুরুত্বে পাঠদান করা হয়। রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনাকে তুলে ধরেছে অন্যান্য রাজ্য বলেই অভিমত প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্কুলেও এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। শিক্ষকেরা জানান, আগে প্রতিটি ক্লাসে প্রথম বেঞ্চিতে বসার জন্য ছাত্ররা দ্বন্দ্ব করত। আবার ক্লাসের পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়া ছাত্ররা ইচ্ছা করে শেষ বেঞ্চে বসত। এছাড়াও ক্লাসে বোর্ডের লেখা দেখতে সমস্যায় পড়তে হত পিছনে বসা পড়ুয়াদের। এবার থেকে ক্লাসরুমে গোলাকার বিন্যাসে বসার ব্যবস্থায় তাদের সব সমস্যা দূর হবে বলে মনে করছে শিক্ষকরা।