গোপাল রায় আরামবাগ: প্রতিবছর বন্যার সঙ্গে লড়াই করা আরামবাগ মহকুমার খানাকুল সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফি বছর ডিভিসির ছাড়া জলে বানভাসি হয় খানাকুল। অন্যান্য এলাকার সাইকেল, মোটরসাইকেল প্রয়োজনীয় যানবাহনের সঙ্গে এই এলাকার মানুষের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ মাধ্যম ছোট নৌকা। এই এলাকার বহু মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে বর্ষায় বন্যায় যাতায়াত করার জন্য ছোট ছোট নৌকা কিনে রেখেছেন।
হুগলি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খানাকুল থানার মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য দেওয়া হয়েছে ট্রাক্টর। নৌকা ছাড়াও প্রশাসনের দেওয়া ট্রাক্টর যোগাযোগের একমাত্র ভরসা সাধারণ মানুষের। এই বছরও এই ছবির পরিবর্তন হয়নি। রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর আরও বেড়েছে। এর মধ্যেই আরও জল ছেড়েছে ডিভিসি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে খানাকুলে। যদিও বন্যার প্রকৃত কারণ আড়াল করা হয় রাজনৈতিক কারণে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নদীকে বুজিয়ে পর্যটন কেন্দ্র, ইটভাটা সহ ব্যবসায় জড়িয়ে রয়েছে প্রভাবশালী নেতারা। এর ফলে নদীর গতিপথে বাধা পেয়ে ভেঙে যায় বাঁধ।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
বর্তমানে খানাকুলের চারটি পঞ্চায়েতের ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত। একের পর এক গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলিতেও জল ক্রমশ বাড়ছে। নতুন করে প্লাবিত খানাকুল ২নং ব্লকের বেশ কিছু এলাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খানাকুলের মাড়োখানা পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেখানে একাধিক স্কুল জলমগ্ন, ক্লাসরুমের ভিতর জল থইথই অবস্থা। বহু একতলা বাড়ি জলে ডুবে গিয়েছে। ফলে কেউ দোতলায়, আবার কেউ বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। মাড়োখানা পঞ্চায়েত থেকে পানশিউলি বাজার পর্যন্ত যাওয়ার মূল রাস্তায় কোথাও এক কোমর, কোথাও আরও বেশি জল পেরিয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বাড়ির সামনেই বাঁধা রয়েছে পানসি বা ছোট নৌকা। কারণ যা পরিস্থিতি তাতে নৌকায় বা পানসিতে ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনও মাধ্যম নেই। রাস্তাঘাট সবই জলের তলায়।
বন্যা দুর্গত মানুষদের অভিযোগ সরকারিভাবে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি । বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের কল বন্যায় ডুবে গিয়েছে, এমনকী বহু মানুষ একপ্রকার জলবন্দী হয়ে পড়েছে। সরকারি ত্রাণ সেভাবে পৌঁছচ্ছে না তাদের কাছে। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ত্রাণ নিয়ে বন্যা দুর্গত মানুষের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু মিটছে না সমস্যা, চরম সমস্যায় খানাকুলের বন্যা দুর্গত মানুষজন। প্রায় ১০ দিন ধরে এই জলযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ডিভিসি জল ছাড়া অব্যাহত রাখায় চিন্তা বাড়ছে খানাকুলের দুর্গত মানুষদের। খানাকুলের বন্যা দুর্গতরা এই দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি পাবে তা এখনো নিশ্চিত করে জানা নেই। কারণ প্রত্যেক বছরই প্রায় তিন থেকে চার মাস এই জল যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। স্থানীয় মানুষজনের দাবি, এই বছরে সবে শুরু হয়েছে ডিভিসির জল ছাড়া। যেভাবে দফায় দফায় লাগাতার জল ছাড়ছে তাতে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা আর অভিযোগ করেন, কত বিধানসভা ভোটে আরামবাগ মহাকুমার চারটি বিধানসভা রাজ্যের শাসক দল অর্থাৎ তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। আর সেই কারণে ত্রাণ বন্টনের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে সাধারণ মানুষ কবে এই জল যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবে সেদিকেই তাকিয়ে আছে খানাকুল সহ আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দারা।
