সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা ও অপারেশন সিঁদুরের পর সোমবারই প্রথম খুলল সংসদের সিং দরজা। সংসদের বাদল অধিবেশন নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা এখন তুঙ্গে। একদিকে পহেলগাঁও জঙ্গি হানার ঘটনাকে সামনে রেখে দেশের নিরাপত্তাহীনতা, অভ্যন্তরীণ সুরক্ষায় প্রশ্নচিহ্ন ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং এর প্রেক্ষিতে বিদেশনীতি নিয়ে কেন্দ্রের শাসক পক্ষকে কোণঠাসা করতে চায় বিরোধী ঐক্যবদ্ধ জোট ‘ইন্ডিয়া’। পাশাপাশি ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন বা এসআইআর বিরোধিতাতেও এককাট্টা হয়েছে বিরোধী দলগুলি। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতিগত ব্যর্থতা এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা বজায় রাখতে মরিয়া অবিজেপি বিরোধীপক্ষ।
ইতিমধ্যেই সংসদের বাদল অধিবেশন নিয়ে সর্বদল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বদলের তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যোগ না দেওয়া হলেও গত শনিবার ইন্ডিয়া বৈঠকে কলকাতা থেকেই ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অপারেশন সিঁদুরের পর একাধিক দেশে গিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে সরব হওয়া এবং অপারেশন সিদুরের সাফল্য কাহিনী নিয়ে সওয়াল করার পাশাপাশি ওই দেশগুলির বক্তব্য থেকে উঠে আসা ভারতের বিদেশ নীতির দুর্বলতা গুলি সংসদে চিহ্নিত করতে চান অভিষেক। পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালীদের নিয়ে ভোট রাজনীতির জন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশনের নামে যোগ্য ভোটারদের ভোটাধিকারের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগেও সংসদে সরব হবে তৃণমূল। গত শনিবারের বিরোধী জোটের বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দেওয়া এই প্রস্তাবগুলি সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়েছে। এই যাবতীয় ইস্যুর বিরুদ্ধে সংসদে ভিতরে ও বাইরে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চায় বিরোধীপক্ষ। যদিও সোমবার কলকাতায় ২১ জুলাই এর রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় সংসদে কোন তৃণমূল সংসদ হাজির থাকবেন না তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মূলত প্রধান আটটি ইস্যুকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় শাসকদল তথা বিজেপিকে সংসদীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা করতে চায় জোটবদ্ধ ‘ ইন্ডিয়া ‘।
সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষায় কেন্দ্রিয় ব্যর্থতা ও ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে তেমনি চার জঙ্গির নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গে কেন্দ্রের ব্যর্থতাকেও সংসদে বিরোধিতার মূল হাতিয়ার করতে চায় বিরোধীপক্ষ।
অপারেশন সিঁদুর’-এর ফলাফল এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর যুদ্ধ বিরতির বাস্তব কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইন্ডিয়া। পাশাপাশি ভারত পাক যুদ্ধ বিরোধী নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর লাগাতার মন্তব্য বা হস্তক্ষেপ কার্যত কেন্দ্রের কূটনৈতিক দুর্বলতা বলেই মনে করছে ইন্ডিয়া।
ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে স্পেশাল
ইনটেনসিভ রিভিসন বা SIR এর বিরোধিতা এবং এনিয়ে কেন্দ্রীয় উদ্যোগে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে বিরোধী পক্ষের এই বৈঠকে।
চিন, পাকিস্তানসহ একাধিক প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে বিদেশনীতির অযোগ্যতা ও অস্বচ্ছতা প্রকট হয়েছে বলেই মনে করে ইন্ডিয়া। তা নিয়েও সংসদের ভিতরে ও বাইরে শাসক দলকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায় বিরোধীরা।
ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও যৌক্তিকতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। জোটের মতে, এতে সংবিধান বিরোধী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মিলিমিটেশন প্রশ্নে সাসকের জবাবদিহি চাইতে পারি বিরোধী দলের নেতৃত্বরা।
সাম্প্রতিক এয়ার ইন্ডিয়া ড্রিমলাইনারের দুর্ঘটনায় পর্যাপ্ত তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। তদন্তে সঠিক কি বেরিয়ে এল তা নিয়ে পর্যালোচনা চায় বিরোধীরা।
সংখ্যালঘু, এসসি, এসটি, মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং
গোষ্ঠী হিংসা ও বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে বলে অভিযোগ তুলেছে জোট। এনিয়ে কেন্দ্রের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় বিভাজন ও গোষ্ঠী বৈষম্য এবং হিংসার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রে জবাবদিহি চাইবেন ইন্ডিয়া নেতৃত্ব। সংসদের বাদল অধিবেশন চলাকালীন পরিস্থিতি অনুযায়ী রণকৌশল ঠিক করতে বিরোধী দল গুলির শীর্ষস্তরের নেতৃত্বদের নিয়ে মুখোমুখি বৈঠক ডাকা হবে। যেখানে ইন্ডিয়ার সমস্ত দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন এবং আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা স্থির হবে।