সন্দীপন বিশ্বাস
মাঝে মাঝে সংবাদে দেখা যায়, সিবিআই এবং ইডিকে সুপ্রিম কোর্ট তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। অর্থাৎ তদন্তের বহুক্ষেত্রে সিবিআই এবং ইডি তাদের সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলে। কিংবা দেখা যায়, তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের গড়িমসি এবং গাফিলতি। সম্প্রতি ফের সেই ঘটনা ঘটল। সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসিত হল ইডি।
কর্ণাটকের মুডা জমি দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার স্ত্রী বি এম পার্বতীর। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করতে চেয়েছিল ইডি। এর আগে মাদ্রাজ হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করেছিল। তাকে চ্যলেঞ্জ জানিয়ে ইডি সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেন, কেন রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে ইডি জড়িয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক লড়াই ভোটের ময়দানে হওয়া উচিত, আদালতে নয়।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
মাদ্রাজ হাইকোর্টে অন্য একটি মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ইডির বাড়াবাড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ইডি কি কোনো ড্রোন, নাকি সুপার কপ যে তাদের সব জায়গায় হানা দিতেই হবে?
এরকম শত শত উদাহরণ রয়েছে। আসলে আইটি, ইডি এবং সিবিআই চিরকালই কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক অস্ত্র। সব সরকারই কমবেশি এটার অপব্যবহার করেছে। একসময় অর্থাৎ মনমোহন জমানায় বিজেপি সিবিআইয়ের নামকরণ করেছিল ‘কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ । বারবার প্রমাণিত হয়েছে প্রকৃত তদন্তের পাশাপাশি এই দুই সংস্থাকে ব্যবহার করা হয় বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে টাইট করতে, তাদের হতোদ্যম করতে। একটা পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মোদি সরকার কেন্দ্রে আসার পর থেকে গত এগারো বছরে ১৯৩ জন এমপিকে টার্গেট করে নেমেছিল ইডি। তার মধ্যে মাত্র দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করা গিয়েছে।
মাদ্রাজ হাইকোর্টে অন্য একটি মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ইডির বাড়াবাড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ইডি কি কোনো ড্রোন, নাকি সুপার কপ যে তাদের সব জায়গায় হানা দিতেই হবে?
এই তথ্য মোদি সরকার নিজেই কবুল করছে সংসদে। বাকিদের ক্ষেত্রে তাহলে ইডি ঝাঁপিয়ে পড়ে তদন্ত শুরু করল কেন? পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক উস্কানি ছিল। শুধুই কি বিরোধী নেতাদের বিব্রত করে, সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা? আমাদের এই রাজ্যেও বারবার ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সিবিআই এবং ইডির অফিসাররা। কিন্তু সেভাবে কতটা তাঁরা প্রমাণ উদ্ধার করতে পেরেছেন! আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে মোদি সরকার ইডি এবং সিবিআইকে ডানহাত এবং বাঁহাত করে ফেলেছে।
গণতন্ত্রের পক্ষে এটা মোটেই শুভ নয়। সিবিআই এবং ইডির কাজ গোপনে তদন্ত করা। তার রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মিডিয়াকে ট্রায়ালে নামিয়ে দিচ্ছে। পরোক্ষে নানা সত্য মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এটাই বর্তমানে বিভিন্ন তদন্তের মূল লক্ষ্য। তাই শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ মামলা দিশা খুঁজে পাচ্ছে না।
আরও পড়ুন
এই নিয়ে দেশের বিরোধী নেতারা বারবার কেন্দ্রকে বিঁধেছেন। রাহুল গান্ধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরি থেকে এম কে স্ট্যালিন বা উদ্ধব ঠাকরে এঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন যে, ইডি ও সিবিআইকে মোদি সরকার রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে, যা গণতন্ত্রকে ক্ষতবিক্ষত করছে।
গণতন্ত্রের পক্ষে এই অভ্যাস যথোপযুক্ত নয়। যদিও এই অভ্যাস চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। তাই ইদানীং মানুষের কাছে ইডি ও সিবিআইয়ের তদন্ত বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। এর দায় কেন্দ্র সরকারের। এই দুই সংস্থার স্বাধীন সত্তা প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতন্ত্রের বিপন্নতা বাড়বে।