কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী
নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে,স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে থাকা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন বিভাগটিকে রাজ্য সরকারেরই অধীনে একটি স্বাধীন দফতর করতে হবে। অন্যান্য দফতরের যেমন নিজস্ব বাজেট থাকে, তেমনই এই দফতরের পৃথক বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনের মতে তাতে নাকি এই দফতর স্বাধীনভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচনের কাজ পরিচালনা করতে পারবে। এমন সময় নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশ এল, যখন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়েই বিরোধীরা হইচই শুরু করেছে সারা দেশে। মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে।
আর ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন এখন বিরোধীদের তোপের মুখে। মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। এবং বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এই নিবিড় সংশোধনের কাজ শুরু হতে চলেছে শীঘ্রই। যা নিয়ে রাজ্যের শাসক দল সুর চড়িয়েছে সপ্তমে। শুধু, শাসক দলই নয়, রাজ্যে বিরোধী দলগুলিও একই সুরে কমিশনকে বিঁধছে।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
প্রাক্তন এক সিইওর কথা, রাজ্যের সিইও বিভাগ স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে থাকলেও তাঁদের আমলে রাজ্য সরকার নির্বাচনের কাজে হস্তক্ষেপ করেছে এমন নজির তাদের জানা নেই। এমনকী সিইও বিভাগটি স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে থাকলেও দফতরের বাজেটে সাব হেডে সিইও দফতরের পৃথক বরাদ্দ ত্থাকে। ফলে, দফতর চালাতে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়েছে এমন ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজ, টাকা পয়সা, জনবল ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে সিইও এর কোনও দায়বদ্ধতা নেই। আজও আছে বলে মনে হয় না। সিইও দায়বদ্ধ শুধুমাত্র ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতি সক্রিয়তা নিয়ে। তাই, প্রতিক্রিয়া জানাতে অপেক্ষা করেনি তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম আর কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারের স্পষ্ট কথা, ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে মমতা ব্যানার্জির তীব্র প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশন ভয় পেয়ে মানুষকে ভয় দেখাতে শুরু করেছে। কমিশন ঠিক কী চায় তা স্পষ্ট করেনি। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বাদ দিয়ে তো কমিশন কাজ করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার। মহারাষ্ট্রে ভোট পড়া নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে তাতে বিজেপির উপর ভরসা রাখা আরও কঠিন। ফলে কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়।
আরও পড়ুন
ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার শুরু থেকেই সিইও বিভাগটি এই রাজ্যে স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে কাজ করে আসছে। অবশ্য, পরর্বতীতে আমাদের রাজ্যে স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে হিল অ্যাফায়ার্স কথাটি যুক্ত হয়েছে।মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই রাজ্যের সিইও-র নিয়োগকর্তা রাজ্য সরকার নয়, ভারতের নির্বাচন কমিশন। যদিও তার আইএএস ক্যাডার থেকে রাজ্য সরকার তিনটি নাম নির্বাচন কমিশনের কাছে সুপারিশ করে। কিন্তু সেই সুপারিশ যে নির্বাচন কমিশন মেনে নেবে তার নিশ্চয়তা নেই।
আমাদের রাজ্য সহ একাধিক রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে কমিশন একাধিকবার প্যানেল চেয়েছে। ফলে, সিইওর পক্ষপাতিত্ব করার নজির কম। তা ছাড়া মনে রাখতে হবে, সিইওকে রাজ্য সরকার কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। অন্যদিকে, বিশেষ করে নির্বাচনের কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বেশিরভাগ নির্দেশ রাজ্য সরকারের কাছে যায় সিইও’ র মাধ্যমে।
এক প্রাক্তন আমলার কথায়, যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের দফতরগুলি নামে পৃথক থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই দফতরগুলি চলে, সেখানে সিইও দফতর পৃথক করে কতটুকু নিরপেক্ষতা বাড়ানো সম্ভব- সে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও রাজ্যের সিইও দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, সারা দেশে রাজ্য সরকারের অধীনেই পৃথক সিইও দফতর রয়েছে।
