মানুষ বিজ্ঞানের নানান আবিষ্কার করে চলেছে। এবার বিজ্ঞান মানুষকে নিয়ে নানান আবিষ্কার করবে। না, এটা ভুল নয়। আবিষ্কার অর্থে গোটা মানুষটা তৈরির কথা বলা হচ্ছে । সত্যি, ভবিষ্যতে আস্ত মানুষ তৈরি করার পথে এগোচ্ছে বিজ্ঞান। জানা গেছে, পরীক্ষাগারে মানুষের গঠনের সব থেকে জটিল অংশ ডিএনএ তৈরির কাজ প্রায় এগিয়ে এসেছে। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের ডিএনএ নামক যে উপাদান, তা আমাদের জিনগত তথ্য বহন করে। ডিএনএ থেকেই জিনের জন্ম। বাকি আর মাত্র ৫ বছর। বিজ্ঞানীরা ২০৩০ সালের মধ্যে কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করে ফেলবেন বলেই আশা দেখিয়েছেন। এই অসাধ্য সাধন করতে চলেছে বিশ্বের অন্যতম বড় এনজিও ওয়েলকাম গ্রুপ।
এই খবর জানার পর অবশ্য গোটা পৃথিবী অবাক হয়ে গেছে। বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানী এবং চিকিত্সকরা বলছেন, প্রকৃতি বা ঈশ্বর বলতে আর বোধহয় কিছু রইল না। ওয়েলকাম গ্রুপ এই কৃত্রিম ডিএনএ তৈরির গবেষণা শুরু করেছে। প্রচুর টাকা ঢেলে তারা দুনিয়ার সেরা বিজ্ঞানীদের নিয়ে এসেছে। প্রাথমিকভাবে একটা গবেষণাগারও তৈরি হয়ে গিয়েছে। নাম হিউম্যান ডিএনএ রি-ডিজাইন অ্যান্ড রি-অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম। মানুষের ডিএনএ- আদলে কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করার দিকে এগোচ্ছে তারা। এই পরীক্ষাগারে বিশ্বের প্রায় আটশো পঞ্চাশ জন তাবড় বিজ্ঞানী একসাথে কাজ করে চলেছেন । তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা কৃত্রিমভাবে মানব ডিএনএ তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ এই কাজ চলবে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ সায়েন্সের ডিন অফ সায়েন্স জেনিস মিলিব্যান্ডের দাবি, জিনের ব্যাপারে মানুষ মাত্র ১৪ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। ৮৬ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। জিনকে ঘিরে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে মানুষের বেশিরভাগ অসুখ এবং রোগের উত্পত্তির কারণ জানা যাবে। অথচ জিনের গঠন ও চরিত্র নিয়ে অনেকটাই এখনও বিজ্ঞানীদের নাগালের বাইরে।
গবেষক দলের সদস্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলিয়ান সেল বিষয়টা সহজ করে বুঝিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ধরুন, আপনার ক্যান্সার বা অন্য কোনও জটিল অসুখ হয়েছে। বা আপনাকে বয়সের তুলনায় অনেক বয়স্ক দেখতে লাগে। সেটার কারণ তো আপনার জিনেই রয়েছে। আমরা এমন একটা থেরাপির সন্ধান করছি, যা বিভিন্ন অসুখ সারাতে পারবে। রোগকে আগে থেকে চিনতে পারবে। মোদ্দা কথা, মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করবে।’
তবে কৃত্রিম ডিএনএ তৈরির ফল যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। যেমন ধরুন আপনার শরীরে থাকা ডিএনএ নিয়ে কেউ ল্যাবরেটরিতে একটা কৃত্রিম ডিএনএ বানিয়ে ফেলল। তারপর সেই ডিএনএ দিয়ে দৈত্যরূপী মানুষ তৈরি হবে না, তারই বা গ্যারান্টি কোথায়? তবে এই পরীক্ষার জন্য যেভাবে কর্পোরেট সংস্থাগুলি টাকার জোগান দিচ্ছে, তাও বেশ ভাবনার বিষয়। তারা নিশ্চই শুধু মানবকল্যাণের কথা ভেবে এটা করছে না। না জানি তাদের স্বার্থ কী ?
