আর কয়েকদিন পরেই বাইশে শ্রাবণ। বাঙালির প্রাণের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। কিন্তু বাঙালি মননে এবং সংস্কৃতিতে যে রবি ঠাকুর অমর। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু নেই! তাঁর অগাধ প্রতিভা ভাণ্ডার থেকে মণি-মানিক্য তাই আজও খুঁজে চলেছে বাঙালি। সেই অনুসন্ধানে ব্রতী হয়ে এক নতুন পথের সন্ধান পেয়েছেন এই সময়ের তিন গুণী শিল্পী, পদ্মশ্রী পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, শ্রীকান্ত আচার্য এবং কবি জয় গোস্বামী। এই খোঁজের নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘রবি রাগ পথে’। নামকরণ করেছেন কবি জয় গোস্বামী। আগামী ৯ আগস্ট জি ডি বিড়লা সভাঘরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রবীন্দ্রনাথকে নতুন আলোয় খোঁজার পথ দেখাবেন এই তিন শিল্পী। নিঃসন্দেহে বাঙালি তার নিরন্তর রবীন্দ্রনাথ-চর্চায় এক নতুন পথের দিশা পেতে চলেছেন বলেই আশা উদ্যোক্তাদের।
‘রবি রাগ পথে’ নিয়ে পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে আমি সরোদে কোনও রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাব না, রবীন্দ্রনাথের গান যে রাগে আধারিত সেই রাগ বাজাব। আসলে অনেকেই ভাবেন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গেলে রাগ সঙ্গীত না বুঝলেও চলবে। সেটা কিন্তু একদমই ঠিক নয়। রবীন্দ্রনাথের গানে কিছু কিছু জায়গায় রাগের এমন বিস্তার আছে, সেই রাগ না বুঝলে, না বিশ্লেষণ করলে কিন্তু ওই গান অনুভব করে ঠিকভাবে গাওয়া খুব মুশকিল। রবীন্দ্রনাথের গানে রাগের যে ব্যবহার তা এক বিস্ময়, সেই নিয়ে শুধু একটা ‘রবি রাগ পথে’ যথেষ্ট নয়। অজস্র অনুষ্ঠান করা যায়।’ শ্রীকান্ত আচার্যের কথায়, ‘আমার তো মনে হয় রাগ সঙ্গীত নিয়ে রবীন্দ্রনাথ যা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন, আর কেউ সেভাবে করেননি। রবীন্দ্রনাথের গানে রাগ সঙ্গীত আর কাব্য যেভাবে মিলেমিশে আছে, তা বিশ্লেষণ করলে সত্যিই বিস্ময় জাগে।’
‘রবি রাগ পথে’ শুধুমাত্র আর পাঁচটা রাবীন্দ্রিক অনুষ্ঠানের মতো নয়। এই অনুষ্ঠান আদতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তিন শিল্পীর গভীর অন্বেষণ। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, শ্রীকান্ত আচার্য এবং কবি জয় গোস্বামী, এই তিন জনের সাধনভূমি একেবারে ভিন্ন। এই ত্রিবেণী সঙ্গম সেদিনের অনুষ্ঠানে একটা ত্রিভুজ তৈরি করবেন। রাগপথে এই বিস্তারের অন্বেষণে তিন শিল্পীকে এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। রাগ-রাগিনীর নানা বাঁকে রবীন্দ্রনাথের গান কীভাবে আলো ফেলেছে সেই নিয়েই অনুষ্ঠান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের গান শোনাবেন শ্রীকান্ত আচার্য, সেই গানের রাগ বাজিয়ে শোনাবেন পদ্মশ্রী পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। এখানে জয় গোস্বামী হবেন সূত্রধর। তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনা পাঠ করে কীভাবে রাগ পথে রবীন্দ্রনাথের গান আলো ফেলেছে তা মিলিয়ে দেবেন, সেটাই এই অনুষ্ঠানের প্রধান চমক। বাঙালি কি অপেক্ষায় থাকছে?