যুদ্ধের কাছে আবেগ, ভালোবাসা, বেঁচে থাকার যেন কোনও দাম নেই। যেমন গাজা। সেখানে হামাসের সঙ্গে ইজরায়েলের লড়াইয়ের দাম জীবন দিয়ে চোকাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কুখ্যাত ইজরায়েলি সেনার মিসাইল, বোমা হামলা, গোলাগুলি তো আছেই। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনাহার আর অপুষ্টি। ইজরায়েলের অবরোধের জেরে না খেতে পেয়েই মারা যাচ্ছে শিশুদের পাশাপাশি গাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।
সংবাদ সংস্থা এপির তথ্য উল্লেখ করে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে যে উত্তর গাজার পেশেন্টস ফ্রেন্ডস হাসপাতালে এখন কঙ্কালসার শিশুদের ভিড়। চিকিৎসা, ওষুধ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রায় শেষ। একে একে প্রাণ হারাচ্ছে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা। কেন খাবার পাচ্ছে না যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা? এজন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থা দায়ী করেছে ইজরায়েলকে, যারা এইমুহূর্তে প্যালেস্তাইনে যাবতীয় সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক তথ্য দিয়ে জানিয়েছে যে, গত তিন সপ্তাহে কমপক্ষে ৪৮ জন অপুষ্টি সংক্রান্ত কারণে মারা গেছে। এর মধ্যে ২৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২০ জন শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে এই ২০২৫ সালেই পাঁচ বছরের নীচের ২১ জন শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে। অন্য একটা তথ্য বলছে শুধু জুলাই মাসেই ১৩টি শিশুর মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে। আরও ভয়ঙ্কর তথ্যটি হল, এই সংখ্যাটা প্রতিদিন বাড়ছে।
বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, গাজায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাওয়া সাংবাদিকদেরও খাবারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। কখনও কখনও এক বা দু দিন না খেয়েও পার করে দিতে হচ্ছে। যদিও বিবিসি জানাচ্ছে, বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এখনও গাজার পরিস্থিতিকে ‘দুর্ভিক্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেননি।
আরও পড়ুন
গাজার এমন পরিস্থিতির জন্য চলছে ব্লেম গেম। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অভিযোগ অবরোধ করে রেখে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ত্রাণ সামগ্রীর ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইজরায়েল।যদিও ইজরায়েলের দাবি, গত মে মাসের শেষ থেকে শিশু খাদ্য এবং উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে ৪৫০০ ট্রাককে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে গাজায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের দাবি, প্রতিদিন ৫০০–৬০০ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রীর প্রয়োজন হলেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে গড়ে মাত্র ৬৯টি ট্রাক। এর ফলে খাবার এলেই তা পাওয়ার জন্য লুটপাট করছে মানুষ।
কিন্তু এই সভ্য দুনিয়ায় কীভাবে থামবে অনাহার আর দুর্দশার ছবি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বারবার আবেদন করলেও সেখানে থামছে না হামাস নিধনের নামে নির্বিচার হামলা। গাজার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের অসহনীয় ছবি দেখে এবার গাজায় যুদ্ধ অবসানের দাবিতে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ২৫টি দেশ। গাজাকে বাঁচাতে প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
