বর্ধমান: রাজ্য সরকারের প্রায় ২ বিঘা খাসজমি জবরদখল করে সেখানে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন এক তৃণমূল নেতার ছেলে। এমন অভিযোগ পেয়েই কড়া পদক্ষেপ করল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ ব্লক প্রশাসন ও পুলিস। নির্মীয়মাণ কারখানার জমিতে সরকারি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া ছাড়াও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। পাশাপাশি সরকারি জমি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক পুলিসের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এমন ঘটনা আউশগ্রামের রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রাম বাজারের খানিকটা আগেই গুসকরা ইলামবাজার রাজ্য সড়কের পাশে রয়েছে ৭২ শতক পরিমাণ জমি। আউশগ্রাম মৌজায় থাকা ওই ৭২ শতক জমি সরকারি খাতায় খাস জমি হিসাবে উল্লেখিত হয়ে আছে। মাস দু’য়েক ওই জমিতে কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয়।তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়ায়।এলাকাবাসীর অভিযোগ, আউশগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ইনদাজুল শেখের ছেলে জিয়াউল শেখ ওরফে সাহেব সরকারি জমি জবরদখল করে নেন। সেখানে সাহেব ’অ্যাস ব্রিক’ তৈরির কারখানা চালুর পরিকল্পনা নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে ওই জমিতে লোহার বিমের কাঠামো ও টিনের ছাউনি নির্মাণ করা হয়ে যায়। কারখানার জন্য মেশিনপত্রও সেখানে নিয়ে আসা হয়। কোনও ধরনের লিজ বা অনুমতি ছাড়াই কারখানা নির্মাণের উদ্দেশ্যে সরকারি জমি জবরদখল করার খবর প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে পৌঁছয়।
ঘটনার কথা জানতে পেরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) এই ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ওই জমিতে ইতিমধ্যেই সরকারিভাবে বোর্ড লাগিয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। বোর্ড লাগানোর সময় আউশগ্রাম ১ নম্বর ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের সঙ্গে পুলিস বাহিনীও উপস্থিত থাকে। বোর্ড লাগানো শেষে সরকারি জমি জবরদখল করা নিয়ে ব্লক ভূমি আধিকারিক আউশগ্রাম থানায় এফ আই আর দায়েরও করেন।এই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় শনিবার জানান, “তিন সদস্যের কমিটিকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রিপোর্ট পাওয়ার পর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কে বা কারা এর সঙ্গে যুক্ত পুলিস তদন্ত করে দেখছে।এছাড়াও ওই জমি যে সরকারের অধীনে থাকা জমি , তা জানিয়ে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। ওই জমিতে আর কোনওভাবেই বেআইনি নির্মাণ করা যাবে না।”
এলাকাবাসীর কথায় জানা গিয়েছে, ’সরকারি জমি জবরদখল করে কারখানা নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে, সেই জিয়াউল শেখ ওরফে সাহেব আগে আউশগ্রাম থানার সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করতেন। তাঁর মা হাসিবা বেগম বর্তমানে আউশগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের পদে রয়েছেন। বাবা আউশগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি। ‘প্রভাবশালী নেতা’ হিসাবে তিনি এলাকায় পরিচিত। যদিও ইনদাজুলের সাফাই, তাঁর ছেলে ওই সরকারি জমিতে কারখানার নির্মাণের সঙ্গে জড়িত নন। কে বা কারা কারখানা নির্মাণ করছেন, তাও তিনি জানেন না।
বিষয়টি জানার পর জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘সরকারি জমি জবরদখল রুখতে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেও সরকারি খাসজমি জবর দখলের অভিযোগ সামনে আসছে। ঘটনায় শাসক দলের নেতার নাম জড়াচ্ছে। এর থেকেই পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে বাংলায় এখন রক্ষকই ভক্ষক।’