যখন একজন মহিলা গর্ভবতী হন , তখন সাধারণত জরায়ুতেই ভ্রূণ বিকশিত হয়। কিন্তু এবার যা ঘটল তাতে শিউরে উঠবেন আপনিও! একজন গর্ভবতী মহিলার ভ্রূণ তাঁর জরায়ুর পরিবর্তে তাঁর লিভারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এটা শুনে অবশ্যই অবাক হবেন নিশ্চয়! কিন্তু এমনই এক চমকপ্রদ ঘটনা সামনে এসেছে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর থেকে।
এই শহরে একজন মহিলার লিভারে একটি ভ্রূণ পাওয়া গেছে । চিকিৎসা বিজ্ঞানে, এই অত্যন্ত বিরল এবং বিপজ্জনক অবস্থাকে ‘ ইন্ট্রাহেপাটিক প্রেগন্যান্সি বলা হয়। এতে, জরায়ুর পরিবর্তে লিভারে ভ্রূণ বিকশিত হতে শুরু করে। এমন প্রেগন্যান্সিতে লিভার ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে এবং এমনকী মায়ের মৃত্যুও হতে পারে। এই গর্ভাবস্থায় মায়ের হার্ট ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
ইন্ট্রাহেপাটিক প্রেগন্যান্সি কী?
ইন্ট্রাহেপ্যাটিক গর্ভাবস্থা একটি অত্যন্ত বিরল এবং গুরুতর অবস্থা, যেখানে ভ্রূণ জরায়ুর পরিবর্তে লিভারে বিকশিত হয়। সাধারণত, গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ মায়ের জরায়ুর ভিতরে বৃদ্ধি পায়। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণে, কখনও কখনও ভ্রূণটি ফ্যালোপিয়ান টিউব, পেটের গহ্বর, ডিম্বাশয় বা লিভারের মতো অন্যান্য অঙ্গে বিকশিত হতে পারে। এই অবস্থাকে একটোপিক গর্ভাবস্থা বলা হয়। যখন ভ্রূণটি লিভারে ইমপ্লান্ট করা হয়, তখন এটিকে বিশেষভাবে ইন্ট্রাহেপ্যাটিক গর্ভাবস্থা বলা হয়।
ইন্ট্রাহেপ্যাটিক গর্ভাবস্থার কারণ কী?
এই অবস্থার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে যাওয়া বা ভুল দিকে ভ্রূণ রোপণ করা। ভ্রূণটি পেটের গহ্বরে পড়ে যায় এবং এমন একটি অঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত হয় যা এটিকে রক্ত প্রবাহ সরবরাহ করে এবং যেহেতু লিভারেও রক্ত থাকে, তাই ভ্রূণটি সেখানে বিকাশ করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও, যে মহিলারা আইভিএফ বা অন্যান্য ফার্টিলিটি কৌশল ব্যবহার করেন, ফ্যালোপিয়ান টিউবে সংক্রমণ বা অস্ত্রোপচারের হিস্ট্রি থাকে, অথবা যাঁদের পূর্বে অস্ত্রোপচার বা পেটে আঘাত লেগেছে, তাঁদের ইন্ট্রাহেপ্যাটিক গর্ভাবস্থার ঝুঁকি বেশি থাকে।
এই গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি কী কী?
এই গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পেটের উপরের ডান অংশে তীব্র ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত, বমি, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। লিভারের চারপাশে ফোলাভাব বা চাপ অনুভব করাও এই অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই লক্ষণগুলি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলির থেকে আলাদা, তাই সনাক্তকরণ কঠিন হতে পারে।
ঝুঁকিগুলো কী কী হতে পারে?
এই গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে গুরুতর ঝুঁকি হল লিভার ফেটে যাওয়া, কারণ এটি রক্তে ভরা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। গর্ভে ভ্রূণ যখন আকারে বড় হয়, তখন এটি লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যদি সময়মতো এই অবস্থা শনাক্ত না করা হয় এবং চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে লিভার ফেটে যেতে পারে। এর ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং এমনকী মায়ের মৃত্যুও হতে পারে।
চিকিৎসা হিসেবে, ইন্ট্রাহেপ্যাটিক গর্ভাবস্থার পূর্ণ মেয়াদে চিকিৎসা করা যায় না। এটি নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, ডাক্তাররা ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভ্রূণ অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেন। গুরুতর ক্ষেত্রে, আংশিক লিভার অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে। শুধুমাত্র সময়মতো চিকিৎসাই মহিলার জীবন বাঁচাতে পারে। এই সমস্যা বিরল হলেও গুরুতর। তাই মহিলাদের এমন বিপদ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। জানতে হবে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও।