সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের নির্দেশই যথেষ্ট। এজন্য আলাদা করে কোনও আইন তৈরি করার প্রয়োজন নেই। এই যুক্তিতে ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের উপর অন্তর্ভুক্তি স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যে নতুনভাবে তৈরি করা ওবিসি সংরক্ষণ তালিকার পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা উল্লেখ করে রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় সরকারি বিজ্ঞপ্তির উপর আগস্ট মাস পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য। কারণ কলেজ পড়ুয়াদের ভর্তির ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশ নতুন করে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে এবং কলেজ পড়ুয়াদের ভর্তির ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল রাজ্যে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এর বেঞ্চ হাইকোর্টের নির্দেশের উপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারি করায় আপাতত নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ওবিসি সংক্রান্ত জট কাটতে চলেছে বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
গত ৩ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ ওবিসি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত যাবতীয় রাজ্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি উপর আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে গত সপ্তাহেই হাইকোর্টের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে জরুরি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে আবেদন জানান রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী কপিল সিব্বল। গত সপ্তাহে শুনানির কথা থাকলেও সোমবার এই মামলা তালিকাভুক্ত হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। আজ মামলার শুনানিতে দেশে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, ” এটা আশ্চর্যজনক! হাইকোর্ট কীভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে! কোন যুক্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা জানতে নোটিস করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।” সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, সংরক্ষণ হল প্রশাসনিক কাজের অংশ। সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের নির্দেশই যথেষ্ট। বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি সঠিক নাও হতে পারে। সে বিষয়ে হাইকোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু এভাবে সমস্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি স্থগিতাদেশে বিতর্ক আরও বাড়বে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। সে কারণেই হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট, বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি। হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে অবিলম্বে কলকাতা হাইকোর্টকে নতুন বেঞ্চ গঠন করে দ্রুত শুনানি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। দুই সপ্তাহ বাদে সুপ্রিম কোর্টে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের ফলে যথেষ্ট স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে কলেজ পড়ুয়াদের নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রেও ওবিসি সংরক্ষণ একটি অন্যতম শর্ত। আগস্ট মাস পর্যন্ত হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, তাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এসএসসি নিয়োগের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হতো রাজ্যকে। আপাতত সেই বিড়ম্বনা থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে ওবিসি সংরক্ষণে আইনি জট কাটল বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।