ভারতীয় সিনে দুনিয়ার অন্যতম তারকা ধনুষ। তামিল ছবিতে তাঁর খ্যাতি বহু বছর ধরেই। তবে ২০১৩ সালে যখন ‘রাঞ্ঝনা’ ছবির হাত ধরে বলিউডে পা রাখার কথা ভাবছেন তিনি, তখন পরিস্থিতি এতটা মসৃণ ছিল না। শুধু তাই নয়, তিনি নাকি এই প্রজেক্ট ছেড়ে দেওয়ার কথাই ভেবেছিলেন। হ্যাঁ! যে ছবিতে তাঁর অনবদ্য পারফর্ম্যান্সে বুঁদ হয়েছিলেন দর্শক, প্রথমে নাকি সেই ছবি করতেই চাননি ধনুষ। তাঁকে কীভাবে রাজি করালেন পরিচালক আনন্দ এল রাই? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতির পাতা হাতড়ালেন অভিনেতা। জানালেন কী হয়েছিল সেই সময়।
২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রাঞ্ঝনা’কে অনেকেই কাল্ট ছবি বলে আখ্যা দেন। কিন্তু সেই ছবির প্রস্তাব প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন ধনুষ, নিজেই জানালেন সেই কথা। গোটা বিষয় বড় ভূমিকা পালন করেছিল বাজেট। ‘স্ক্রিন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘সেই সময়, আমাকে মুখ্য অভিনেতা হিসেবে নেওয়ার মতো ঠিকঠাক বাজেট ছিল না ওঁদের। কিন্তু এই ভদ্রলোকের (পরিচালক আনন্দ এল রাই) ইচ্ছা এত তীব্র ছিল, তিনি একমাত্র আমাকে দিয়েই কুন্দনের চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি অন্য যে কোনও অভিনেতাকে ওই চরিত্র অফার করতে পারতেন, অনেকেই রাজি হতেন আনন্দের সঙ্গে। কারণ, বলাই বাহুল্য, চরিত্রটা তো দারুণ।’
ছবিতে কুন্দনের চরিত্র প্রায় সকলেরই মনে আছে। বেনারসের সাধারণ বাড়ির ছেলে, যে একটি মেয়ের প্রেমে একপ্রকার পাগল। নিয়তির বাঁকে, প্রেমে পড়ে, প্রচণ্ড ভালোবেসেও সাড়া পায় না সে উল্টোদিক থেকে। এরপর যখন তাঁর হৃদয় ভাঙে, এবং ভাগ্যের পরিহাসে তাঁর পাশে দাঁড়াতেই ধীরে ধীরে রাজনীতির জগতে পা রাখে কুন্দন। এই চরিত্রের জন্য পরিচালককে বড় ঝুঁকি নিতে হয়েছিল, মত ধনুষের। অভিনেতা বলেন, ‘সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যান তিনি। আমার মনে হয় এটা আমার বলা উচিত নয়, কিন্তু আমার কিছু যায় আসে না! উনি নিজের টাকাও ঢালেন এই ছবিতে। আমাকে কাস্ট করতে সব করেন। উনি আমার মধ্যে কুন্দনকে দেখতে পান এবং নিজের দৃষ্টিভঙ্গীতে অটল থাকেন।’
এমনকী ধনুষের মতো একজন অভিজ্ঞ পারফর্মারের জন্যও এই চরিত্রের চাপ নেহাত কম ছিল না। তিনি স্বীকার করে নেন, হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখার সময় এক ভিন্নধরনের ভয় তিনি অনুভব করেছিলেন, যা আগে কখনও অনুভব করেননি। ধনুষ বলেন, ‘আমার প্রথম ছবির সময় আমি ভয় পাইনি। যখন আমাকে নিয়ে মানুষ আর কোনও আশা রাখেনি, তখনও আমি ভয় পাইনি। আমি এমনই একজন মানুষ। কিন্তু প্রথমবার আমি ভয় পেয়েছিলাম। দায়িত্ববোধ অনুভব করছিলাম। তাই আমি ঈশ্বরের কাছে খুব মন থেকে প্রার্থনা করছিলাম—‘যেভাবেই হোক, এই মানুষটিকে বাঁচাও।’’
শেষমেশ, সেই ঝুঁকি সার্থক হয়। ‘রাঞ্ঝনা’ দর্শক ও সমালোচক উভয়ের কাছেই প্রশংসিত হয়। ধনুষ বলেন, ‘তাঁরা একটা কাল্ট ক্লাসিক বানিয়েছেন। এটা কুন্দন আর জোয়ার গল্প নয়। এটা দু’জন উন্মাদের গল্প, যাঁরা এই ঝুঁকিতে বিশ্বাস করেছিল।’ এই ছবিতে ধনুষের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সোনম কাপুর, অভয় দেওল, স্বরা ভাস্কর এবং মহম্মদ জিশান আয়ুব। পরিচালক আনন্দ এল রাইয়ের কেরিয়ারের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে দাঁড়ায়। রাঞ্ঝনার পর ধনুষ ও আনন্দ এল রাই আবারও একসঙ্গে কাজ করেছেন, ২০২১ সালের ‘অতরঙ্গি রে’ ছবিতে। বর্তমানে তারা ‘তেরে ইশ্ক মে’ ছবিতে কাজ করছেন, যা পরিচালক রাইয়ের মতে, ‘রাঞ্ঝনারই জগতে তৈরি একটি নতুন গল্প।’