গাজায় ইজরায়েলের হামলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নীরবতা’ নিয়ে সোমবার সরব হলেন কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করলেন। গাজা উপত্যকায় ইজরায়েলের সামরিক অভিযানে হাজার হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু এবং ধ্বংসলীলার প্রেক্ষিতে মোদির এই নীরবতাকে “লজ্জাজনক” এবং “ভারতের সংবিধানিক মূল্যবোধের বিশ্বাসঘাতকতা” বলে অভিহিত করেন সোনিয়া গান্ধী।
একটি জনপ্রিয় পত্রিকার প্রবন্ধে সোনিয়া গান্ধী লেখেন, “ভারতকে গাজার সাধারণ মানুষের পাশে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়াতে হবে।” তিনি বলেন, ইজরায়েলের এই বর্বর আচরণ আন্তর্জাতিকভাবে “গণহত্যা ও মানবতা-বিরোধী অপরাধের” শামিল। তিনি আরও জানান, ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত ছিল প্রথম দেশ যারা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ভারত সরকার।
সোনিয়া গান্ধী বলেন, “বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলি আবারও ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে নেতৃত্বের জন্য। সেই ঐতিহ্য অনুসারে মোদি সরকারকে স্পষ্টভাবে গাজার পক্ষ নিতে হবে।” তিনি হামাসের ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর হামলা ও বহু মানুষকে আটক করে রাখার নিন্দা করলেও বলেন, ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া “অত্যন্ত অপরাধমূলক”। তাঁর ভাষায়, “৫৫ হাজারের বেশি নিরীহ প্যালেস্তেনীয় নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু। গাজার অধিকাংশ আবাসিক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”
সোনিয়া আরও লেখেন, “ঔপনিবেশিক মানসিকতা এবং কিছু ধনী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর স্বার্থ চরিতার্থ করতেই ইজরায়েল আর গাজাকে একরকম খালি করে দিতে চাইছে।” তিনি অভিযোগ করেন, ইজরায়েল গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এটি “ইচ্ছাকৃত ও নিষ্ঠুর সামরিক অবরোধ”।বিষয়টিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে তোপ দেগেছেন সোনিয়া।
আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ অমান্য, রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাব উপেক্ষা, এইসব ঘটনা তুলে ধরে কংগ্রেস নেত্রী বলেন, “গাজার সাধারণ মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব আজ শুধু কিছু সাহসী দেশের হাতে।” দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, কানাডার মতো দেশগুলোর পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, “ভারত বহুদিন ধরেই বিশ্বে ন্যায়বিচারের প্রতীক ছিল। এখন সেই ভারতের নীরবতা আমাদের ঐতিহাসিক মূল্যবোধের পরিত্যাগ এবং এক ধরনের কাপুরুষতা।”
এর আগে কংগ্রেসের মুখপত্র ‘কংগ্রেস সন্দেশ’-এও গাজা ইস্যুতে মোদি সরকারের অবস্থান নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছিল।সোনিয়া গান্ধীর কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আগেই গাজায় শান্তির পক্ষে সরব হয়েছেন। সোনিয়া গান্ধীর মতে, গাজায় ইজরায়েলের বর্বরতা গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতের উচিত নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো। মোদি সরকারের নীরবতা ভাঙার আওয়াজ তুলেছেন তিনি।