সঞ্জয় সেন, খালিদ জামিল, অ্যান্টোনিও হাবাস হয়ে রবি ফাউলার। তালিকাটা দীর্ঘ হচ্ছে ক্রমেই। কিন্তু আসল সমস্যাটা যে তিমিরে সেই তিমিরেই। আবার এরই মধ্যে চাউর হয়ে যায়, ভারতীয় দলের কোচ হতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন স্পেনের বিশ্বজয়ী ফুটবলার শাবি এর্নান্দেস এবং কিংবদন্তি কোচ পেপ গার্দিওলা। কিন্তু তারপরই জানা গিয়েছে, শাবির আবেদনটি আসলে জনৈক ১৯ বছর বয়সি ছাত্রের এক অকল্পনীয় মশকরা ছাড়া আর কিছু নয়। ভেলোরের ভিআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটি শাবির নামে একটি ভুয়ো ইমেইল আইডি খুলে আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলেন সর্বভারতীয় ফেডারেশনকে।
বার্সেলোনার ম্যানেজার হিসেবে বছরে শাভি পেতেন প্রায় ৬ মিলিয়ন ইউরো। এরপর আল সাদে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ মিলিয়নে। সেই শাবির নাম ব্যবহার করে এই ভুয়ো আবেদনের ঘটনাটিই চোখে আসলে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, ভারতীয় ফুটবলের অবস্থান এখন ঠিক কোথায়। একদা অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান পাওয়া (১৯৫৬) কিংবা এশিয়ান কাপে রানার্স হওয়া (১৯৬৪) দলটি এখন কার্যত পরিণত হয়েছে মানুষের হাসির খোরাকে। আর হবে নাই বা কেন? বিগত কয়েক বছর ধরে যে সমস্ত নমুনা দেখিয়ে চলেছে ভারতীয় ফুটবল, তাতে এটাই তো হওয়ার ছিল। প্রহসনের পর প্রহসন। ফলস্বরূপ একদা ১০০ -এর নীচে থাকা ভারতীয় দলের এখন র্যাঙ্কিং ১৩৩। বারবার নির্বুদ্ধিতায় ভারতীয় ফুটবলের মুখ পোড়াচ্ছেন ফেডারেশনের কর্তারা।
এমন অবস্থা যে বর্তমানে ভারতীয় ফুটবলের ইউএসপি যাকে মনে করা হয়, স্থগিত হয়ে গিয়েছে সেই আইএসএলও। প্রতিযোগিতার আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ। এ দিকে চুক্তি নবীকরণে ফেডারেশনের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, আগে সংবিধান এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নয়া কমিটি গঠন করতে হবে। তারপর অন্য কিছু। যাকে বলে, চূড়ান্ত লজ্জা! আবার এরই মধ্যে গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে জাতীয় দলের হেড কোচের পদ।
মানলো মার্কেজ ছেড়ে যাওয়ার পর ভারতীয় ফুটবলের হাল এই মুহূর্তে এতটাই বেহাল যে, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নকে মনে হচ্ছে আকাশ কুসুম। মানালোর কোচিংয়ে ভারত হংকংয়ের কাছে হেরেছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ড্র করেছে। কেউ জানে না এই অবস্থায় ভারত এশিয়ান কাপের যোগ্যতা আদৌ অর্জন করতে পারবে কি না। তবু এরই মধ্যে ভারতীয় কোচের পদের জন্য জমা পড়েছে মোট ১৭০ টি আবেদনপত্র। গত বছর অবশ্য আরও বেশি পড়েছিল। ২৯১ টি। কিন্তু এ বছরও কি খুব কম বলা চলে? বিশেষ করে, তালিকায় যেখানে রয়েছে রবি ফাউলার কিংবা অ্যান্টোনিও হাবাসের মতো নাম।
অথচ এরপরেও চূড়ান্ত নামটি ঘোষণা করে উঠতে ব্যর্থ এআইএফএফ। সম্প্রতি এমনটাও শোনা গিয়েছিল যে খুব শিগগিরই খালিদ জামিল, স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন এবং স্তেফান তারকোভিচের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হবে জাতীয় দলের কোচ হিসাবে। এও জানা গিয়েছিল, এর মধ্যে আবার কিছুটা হলেও পাল্লা ভারী খালিদ জামিলের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনিই হতে চলেছেন ভারতের পরবর্তী হেড স্যার। জানানো হয়েছিল এমনটাই। কিন্তু তারপর আবার সব অন্ধকার। কোনও নামই এখনও পর্যন্ত ঘোষণা করে উঠতে পারেনি ফেডারেশন। সব মিলিয়ে ভারতীয় ফুটবল সত্যিই আজ এক হাসির খোরাকে পরিণত। আর সেটা করেছে তারা নিজেরাই।