গোটা দেশ আপাতত ‘সইয়ারা’ জ্বরে কাবু। বক্স অফিসে ঝড় তোলা অহন পাণ্ডে ও অনীত পড্ডা অভিনীত এই ছবির এই মুহূর্তে থামার কোনও লক্ষণই নেই। মুক্তির আগে অনেকে ছবির নামও জানতেন না। কেউ কেউ হয়তো কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট বা কিছু ক্লিপিং দেখেছিলেন। কিন্তু মুক্তির পর থেকেই এই ছবি রীতিমতো দৌড়চ্ছে। প্রথম দিনেই এই ছবি ২১.৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলে।
বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন মানুষ থিয়েটারে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। সেই সময়ে এমন ব্যবসা, তাও দুই নবাগতকে নিয়ে তৈরি ছবির ক্ষেত্রে বড় সাফল্যের বিষয়। দ্বিতীয় দিনে এই ছবি ২৬ কোটি টাকার ব্যবসা করে এবং তৃতীয় দিনে ৩৫.৭৫ কোটির ব্যবসা। ঊর্ধ্বমুখী এই ব্যবসার পরিমাণ সত্যিই চোখে পড়ার মতো।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
তবে সপ্তাহান্তের ব্যবসার থেকেও চোখে পড়ার মতো ব্যবসা হয়েছে সোমবার। বেশিরভাগ ছবির ক্ষেত্রে সোমবার থেকেই আসল লড়াই শুরু হয়। কারণ উইকএন্ডের তুলনায় সপ্তাহের প্রথম দিনে দর্শকের সিনেমা হলে যাওয়ার প্রবণতা কমে। কিন্তু ‘সইয়ারা’ সেখানেও বাজিমাত করেছে। প্রথম সপ্তাহে আগের তিন দিনের থেকে ব্যবসা খানিক কমলেও সেই পরিমাণও ছিল বিশাল।
প্রথম সোমবারেই এই ছবি ২৪ কোটি টাকার ব্যবসা করে, যা এর প্রথম দিনের ব্যবসার পরিমাণের থেকেও বেশি। তবে সবটাই কি ম্যাজিক? এই ছবির ঠিক এক সপ্তাহ আগে অনুরাগ বসু পরিচালিত ‘মেট্রো ইন দিনো’, যা বহু প্রতীক্ষিত একটি ছবি, তা মুক্তির ২০তম দিনে গিয়ে ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করতে পেরেছে। দুর্দান্ত স্টারকাস্ট, বুঁদ হয়ে থাকার মতো গল্প, তবুও ‘সইয়ারা’র ধারকাছ দিয়েও যেতে পারল না ছবিটা।
‘সইয়ারা’ বক্স অফিসে এই ঐতিহাসিক আয় শুরু করেছে মাত্র ৮,০০০টি শো-এর মাধ্যমে, যা সাধারণত হয় না। যেখানে বেশিরভাগ হিন্দি ছবি ২০ কোটির ওপেনিং তুলতে প্রায় ১৮,০০০টি শো-এর উপর নির্ভর করে, সেখানে ‘সইয়ারা’ এই লক্ষ্য ছুঁয়েছে তার অর্ধেক শো দিয়েই। দেশের বড় বড় শহরে প্রথম দিন থেকেই ন্যাশনাল চেইন থিয়েটারগুলিতে সবক’টি শো হাউসফুল হওয়ার খবর মিলেছে। এই সাফল্য আরও চমকপ্রদ কারণ, ছবিটির সেভাবে প্রচার হয়নি বললেই চলে। না ছিল কোনও মিডিয়া ইন্টারভিউ, না সিটি ট্যুর, না কোনও ইনফ্লুয়েন্সার কোলাবোরেশন বা রিল প্রচার।
এমনকী ছবির অভিনেতারা পর্যন্ত জনসমক্ষে আসেননি। কোনও প্রচার ছাড়াই কেবল গল্প বলার শক্তি আর স্ট্র্যাটেজি দিয়েই দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে এই ছবি। এটি এমন একটি হিন্দি ছবি যার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা সকলেও ডেবিউ করেন এবং তবু প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ আয়। আগে এই রেকর্ড ছিল ‘ধড়ক’-এর, যা ২০১৮ সালে জাহ্নবী কাপুর ও ইশান খট্টরকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল এবং সেই ছবি প্রথম দিনে ৮.৭৬ কোটি আয় করেছিল। ‘সইয়ারা’ সেই সংখ্যাকে বহু পিছনে ফেলেছে। প্রচারের বাইরে থেকেও, শুধুমাত্র কনটেন্ট আর কানেকশনের উপর নির্ভর করে সিনেমাটি প্রমাণ করেছে, আজকের দর্শক কী খুঁজছেন—একটি সত্যিকারের ভালো গল্প।
আরও পড়ুন
যদি ‘সইয়ারা’-র সাফল্যের কারণ খুঁজে দেখা হয়, তাহলে বোঝা যাবে সাম্প্রতিক সময়ের সঠিক মানের সিনেমার অভাব। পাশাপাশি, ভালো মিউজিক অ্যালবাম এবং বলিউডের চেনা রোমান্টিক কমেডির ম্যাজিকও বহুদিন ধরেই অনুপস্থিত ছিল। বলিউডি ধাঁচে তৈরি সেই রোম্যান্টিক প্রেমের গল্প যে এখনও সাধারণ মানুষ দেখতে পছন্দ করেন এই ছবি তারই বড় প্রমাণ। এই সিনেমাটি যেন বলিউডের জন্য নতুন প্রাণের মতো—তাজা, সজীব, আর সোজাসুজি তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের টার্গেট করে বানানো।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো—এই সমস্ত মাইলফলক ছোঁয়ার পথে ছবির কোনও প্রচলিত প্রচার কৌশল ব্যবহার হয়নি। না কোনও সাক্ষাৎকার, না বিভিন্ন শহরে গিয়ে গিয়ে প্রোমোশন, না কোনও সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডিং রিল, না ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। এত কিছু ‘নেই’ সত্ত্বেও এই ছবি দেশজুড়ে রেকর্ড গড়েছে। একমাত্র ভরসা ছিল ছবির কনটেন্ট এবং দর্শকদের সঙ্গে তার গভীর আবেগঘন সংযোগ। হয়তো এই ছবি কোনও মাস্টারপিস নয়, কিন্তু ছবির আবেগঘন উপস্থাপনা একে দর্শকদের হৃদয়ের সঙ্গে সত্যিই একাত্ম হতে সাহায্য করেছে। ইতিমধ্যেই ‘সইয়ারা’ ৩০০ কোটির গণ্ডি ছোঁয়ার তোড়জোড় করছে, আর যে গতিতে এই ছবির ব্যবসা এগোচ্ছে, তাতে এই ধারা সহজে থামবে বলে মনে হয় না।